Skip to content

Tachyon

বাংলায় বিজ্ঞান গবেষণায় প্রথম উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম

রকেট কীভাবে কাজ করে?

রকেট নিয়ে আমাদের অনেকেরই আগ্রহ আছে। রকেট কীভাবে কাজ করে তা বোঝার জন্য আপনাকে নিউটনের বল সম্পর্কিত সূত্রগুলো আগে বুঝে নিতে হবে। আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন কত নং সূত্র, তাহলে আমি উত্তর দিব সবগুলোই।

আমরা রকেট উৎক্ষেপণ হওয়াকালে কী কী দেখি? ইঞ্জিন থেকে গ্যাস বের হচ্ছে আর রকেট উড়ে যাচ্ছে। এখন রকেট কীভাবে উড়ছে তা বোঝার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম নিউটনের তৃতীয় সূত্রটি বুঝতে হবে। রকেট উৎক্ষেপণে নিউটনের তৃতীয় সূত্রের ব্যবহার বুঝতে পারলে আপনি খুব সহজেই প্রথম দুইটি সূত্রের ব্যবহার বুঝতে পারবেন।

বাকি কথাগুলো বলার পূর্বে আপনাকে একটি প্রশ্ন করি? আপনি কী মনে করেন রকেট কেনো উড়ে‌? প্রশ্নটি আবারও পড়ুন। রকেট কেন উড়ে? রকেট উড়ছে অর্থাৎ প্রতিমুহূর্তে কিন্তু রকেটের ত্বরণ ঘটছে। এখন রকেট কেন উড়ে‌ প্রশ্নটাকে আরো সহজ করে বলতে পারি রকেটের ত্বরণ কীভাবে হচ্ছে? ইঞ্জিন থেকে গ্যাস বের হয়ে আসছে‌ বলে নাকি আপনি মনে করেন সেই গ্যাস গিয়ে মাটিতে ধাক্কা লেগে আবার উপরে উঠে রকেটে ধাক্কা দেয়, যার জন্য ত্বরণ হচ্ছে? একটু ভেবে দেখুন কেনো রকেটের ত্বরণ হচ্ছে?

অনেকে হয়তো মনে করেছেন গ্যাস গিয়ে মাটির সাথে ধাক্কা লাগে এবং সেই গ্যাস আবার গিয়ে রকেটে ধাক্কা লাগায় রকেটের ত্বরণ ঘটে। যুক্তি হিসেবে বাস্পীয় ইঞ্জিনের কথাও আনতে পারেন। বাস্পীয় ইঞ্জিনে তো বাতাস সজোরে ধাক্কা দেয় বিধায় ইঞ্জিন চলতে থাকে তাই না? রকেটেও মনে হয় তেমন কিছু হয়?

এবার আপনাকে তাহলে আরেকটি প্রশ্ন করি। যদি গ্যাস মাটিতে ধাক্কা লেগে বিপরীতমুখী হয়ে রকেটে ধাক্কা দেয়, যার জন্য রকেটের ত্বরণ ঘটে বলে আমরা ধারণা করছি। রকেট একটু উপরে উঠার পর যখন নিচে কোনো মাটির সারফেস থাকবে না শুধুমাত্র বাতাস থাকবে তখন কী হবে? বলতে পারেন বাতাসে ধাক্কা লাগার মাধ্যমেই ত্বরণ ঘটবে। একটু ভেবে দেখুন তো মাটির শক্ত সারফেসে ধাক্কা দিয়ে প্রাপ্ত বিপরীতমুখী বল দিয়ে আপনি যে পরিমাণে ত্বরণ ঘটাতে পারবেন বায়ুর মাধ্যমে কি আপনি একই পরিমাণে ত্বরণ ঘটাতে পারবেন? পারবেন না। ধরে নিলাম কিছুদূর উড়ার পর শক্ত সারফেস না পাওয়ায় রকেটের ত্বরণ কমে যাবে। তাহলে বায়ুমন্ডল পার করার পর আপনার রকেট আপনি কিভাবে জায়গা মতো নিয়ে যাবেন? সেখানে তো বায়ুও নেই!

আসলে রকেট এভাবে কাজ করে না। নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুসারে প্রতিটি ক্রিয়ারই সমান এবং বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া রয়েছে। রকেটের ভিতর জ্বালানি রাখা হয়। সেখানে দহন ঘটে। কিন্তু দহনের পরে এই গ্যাসগুলো বের হওয়ার জন্য সরু একটি পথ রাখা হয়। ফলে গ্যাসগুলো অতি-উচ্চচাপে বের হয়ে আসে। এই উচ্চচাপে বের হওয়ার ফলে গ্যাসগুলো একটি বিপরীতমুখী বল রকেটের দিকে দেয় যার কারণে রকেট উড়তে শুরু করে!

আশাকরি রকেট কীভাবে উড়ে তা বুঝেছেন। এবার রকেটের পিছনে কিভাবে নিউটের প্রথম এবং দ্বিতীয় সূত্র কাজ করে তা বলি। নিউটনের প্রথম সূত্র মতে আপনার গতিশীল বস্তুকে বাধা না দিলে তা গতিশীলই থাকবে। রকেট যখন আমাদের বায়ুমন্ডল ত্যাগ করে তখন কিন্তু রকেটের‌ একই পরিমাণে জ্বালানি খরচ করার প্রয়োজন পরে না। কেননা সেখানে বায়ু নেই যার মাধ্যমে রকেট বাধাপ্রাপ্ত হবে। তখন শুধু নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছানোর জন্য সামান্য জ্বালানি খরচ করা হয়। আবার কিছুকিছু ক্ষেত্রে জ্বালানি ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়! সহজে বোঝার জন্য একটি উদাহরণ দেই। আমেরিকার রকেট উৎপাদনকারক কোম্পানি স্পেস-এক্স এর ফ্যালকন-নাইন একটি বিখ্যাত রকেট। এই রকেটের বিশেষত্ব রকেটটি মহাকাশে গিয়ে আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে। এবার ভেবে দেখুন কীভাবে রকেটটিকে পৃথিবীতে ফেরত আনা যায়? মহাকাশে যদি একই পরিমাণ বলের প্রয়োজন হতো তাহলে কি কখনো রকেটগুলোকে ফেরত আনা যেত?

এবার বলি রকেটে নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রের ব্যবহার নিয়ে। নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র দুইটি কথা বলে।

  1. ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক।
  2. প্রযুক্ত বলের দিক ভরবেগের পরিবর্তনের দিক।

প্রথম পার্ট নিয়ে আগে বলি। আমরা যদি ভরবেগের ক্যারেক্টারাইজ করি তাহলে বলতে পারি কোনো গতিশীল কিছু থামাতে আপনার কতটুকু কষ্ট হচ্ছে তাই ভরবেগ। যে জিনিসের ভরবেগ বেশি, তাকে থামাতে কষ্ট বেশি। আর যে জিনিসের ভরবেগ কম, তাকে থামাতে কষ্টও কম। এখন রকেটের দিকে আমরা যে বিপরীতমুখী বলের মাধ্যমে রকেটের ত্বরণ ঘটাই, সেই বলের পরিমাণ যদি আমরা বৃদ্ধি করি তাহলে অবশ্যই রকেটের ত্বরণ বৃদ্ধি পাবে। ত্বরণ যখন বৃদ্ধি পাবে তখন অবশ্যই রকেটটি থামাতে আপনাকে আরো কষ্ট করতে হবে। তার মানে বলের পরিমাণ বৃদ্ধি করার ফলে ভরবেগও বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ ভরবেগের পরিবর্তন প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক।

এবার দ্বিতীয় পার্ট নিয়ে‌ বলি। দ্বিতীয় পার্টে অনেক মজার একটি জিনিস ঘটে। আমাদের রকেট এখানে নাচতে শুরু করে! যদিও এই কথাটা শুনে অনেকে ভ্রু- কুচঁকে পোস্টের দিকে তাকিয়ে আছেন, আবার অনেকে আমাকে ধরে পেটাতে চাচ্ছেন কারণ রকেট তো সোজা উপরে যায়। তাহলে নাচানাচি কখন করে?

আমরা অনেকেই রকেটের ফিন দেখেছি কিন্তু ফিনের কাজ জানি না। এই ফিনের কারণেই মূলত আমরা রকেটকে নাচতে দেখি না। ফিন না থাকলে কিন্তু রকেটকে আমরা নাচতে দেখতাম! ফিন হলো রকেটের‌ নিচের দিকে অনেকটা প্লেনের Wing এর মতো বা দুইপাশে প্লেনের যে ডানা থাকে তেমন।

রকেটের ফিন। সূত্র : নাসা

যখন রকেটের নিচে আমরা বল বাড়িয়ে দেই তখন ভরবেগের পরিবর্তন হয় এবং ভরবেগ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু কোনদিকে বৃদ্ধি পায়? সাধারণভাবেই আমরা বুঝতে পারি যখন আমরা নিচের দিকে বল প্রয়োগ করি তখন উপর থেকে রকেটকে থামানো কষ্টকর। অর্থাৎ যেদিকে আমরা‌ বল প্রয়োগ করলাম সেদিক থেকে রকেটকে থামাতে আমাদের কষ্ট হবে বা সেদিকটাই ভরবেগের পরিবর্তনের দিক।

ফ্যালকন নাইনের ফিন। সূত্র : (Teslarati – Pauline Acalin)

এখন ভরবেগের পরিবর্তনের দিক রকেটের উপরের দিকে হওয়ায় দুইপাশ থেকে রকেটকে থামানো কিন্তু খুব একটা কঠিন কাজ হয় না! বাতাস তখন তাই করে। বাতাসের কারণে তখন রকেট উপরে যাওয়ার সময় সোজা না গিয়ে গোল গোল ঘুরতে থাকে! এই গোল গোল ঘোরা বন্ধ করার‌ জন্যই রকেটে ফিন ব্যবহার করা হয়। ফলে বাতাস সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না এবং আমাদের রকেটও সোজা উপরের দিকে যায়।

কেউ কেউ বলতে পারেন ভাই অনেক রকেটে তো আমি ফিন দেখি না।‌ যেমন: ফ্যালকন-নাইন। ফ্যালকন-নাইন যেহেতু পৃথিবীতে ফিরে আসে সেহেতু ল্যান্ড করার ব্যবস্থা নিচের দিকে রাখা হয়। তাই সেখানে ফিন রাখা সম্ভব হয় না। কিন্তু আপনি খেয়াল করলে দেখবেন ফ্যালকন নাইনে রকেটের উপরের দিকে বড়ো-কালো বাক্স আকৃতির কিছু থাকে যার ভিতর বড়ো বড়ো ফাঁকা জায়গা থাকে। এটাই মূলত ফিনের কাজ করে এখানে!

তো এবার কাজ শুরু করে দিন! আপনার চিরশত্রুকে ইঞ্জিনের সাথে বেঁধে পাঠিয়ে দিন মহাকাশে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।