Skip to content

Tachyon

বাংলায় বিজ্ঞান গবেষণায় প্রথম উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম

একটুখানি রায়চৌধুরী

লেখক : নাজমুল সরদার আশিক

বাংলাদেশের মাটিতে জন্ম নেওয়া যে কয়েকজন পদার্থবিজ্ঞানীর কীর্তি সারা বিশ্বে সাড়া ফেলেছে, তাঁদের মধ্যে একজন হলেন অমল কুমার রায়চৌধুরী। সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব ও বিশ্বতত্ত্ব-সম্পর্কিত আধুনিক গবেষণায় তাঁর আবিষ্কৃত সমীকরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাঁর নামানুসারে সমীকরণটি এখন ‘রায়চৌধুরী সমীকরণ’ নামে পরিচিত। তাঁর বিখ্যাত ছাত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভারতের বিখ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ও স্ট্রিং থিওরির অন্যতম গবেষক অশোক সেন।

রায়চৌধুরী সমীকরণ আধুনিক পদার্থবিদ্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। চতুর্মাত্রিক জগৎ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে বিবর্তিত হয়—সেটার ব্যাখ্যা মেলে এই সমীকরণ থেকে। এটি থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ব্যাখ্যা করা যায়। নিউটন তাঁর বিখ্যাত মহাকর্ষ সূত্রে বলেছিলেন, মহাবিশ্বের যেকোনো দুটি বস্তুকণার মধ্যে মহাকর্ষ নামের একটি আকর্ষণধর্মী বল কাজ করে। কিন্তু এই বলের উৎস কী, সেটা নিউটন কখনোই বলে যেতে পারেননি। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব থেকে এটা প্রমাণিত হয়, মহাকর্ষ কোনো বল নয়, এটা আমাদের চতুর্মাত্রিক স্থান-কালের একটা বৈশিষ্ট্য। কোনো বস্তুর উপস্থিতিতে স্থান-কাল বেঁকে যায় আর সেই বক্রতার জন্যই আমরা মহাকর্ষের প্রভাব দেখতে পারি। এখন প্রশ্ন হলো, মহাকর্ষের আকর্ষণধর্মিতার ব্যাখ্যা কী? প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখি, গাছ থেকে ফল মাটিতে পড়ছে, চাঁদ পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে। অথচ আইনস্টাইনের দেওয়া ব্যাখ্যায় মহাকর্ষ একটি সম্পূর্ণ জ্যামিতিক ব্যাপার।

তাহলে সেই জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্যের কোথায় এই আকর্ষণধর্মিতার ব্যাখ্যা লুকিয়ে আছে? রায়চৌধুরী সমীকরণ থেকে আমরা এর খুব সুন্দর একটা ব্যাখ্যা পাই। কোনো ধরনের বলের প্রভাব ছাড়া একটি বস্তু যে পথে চলাচল করে, সেটাকে বলা হয় জিওডেসিক। রায়চৌধুরী দেখান, যেকোনো ভারী বস্তুর উপস্থিতিতে তার আশপাশের জিওডেসিকগুলো বস্তুটির দিকে বেঁকে যায়। এটাই মহাকর্ষের আকর্ষণধর্মিতার ব্যাখ্যা দেয়।

রায়চৌধুরী সমীকরণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল রয়েছে। আমরা জানি, এই মহাবিশ্বের শুরু হয়েছে বিগ ব্যাং নামের এক বড় বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে। ধরে নেওয়া যাক, আমি কোনো একটি বস্তুর পুরো জীবনের ইতিহাস জানতে চাই। তাহলে আমাকে যেটা করতে হবে সেটা হলো, চার মাত্রার জগতে বস্তুটি যে পথে চলেছে, সেই পথ ধরে সময়ের পেছন দিকে যেতে হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, এই পেছনে যেতে যেতে যখন আমরা বিগ ব্যাংয়ের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছাব, তখন আর বলতে পারব না, এর আগে কী হয়েছিল। অর্থাৎ আমাদের জগতের যেকোনো বস্তুর চলার শুরু ওই বিগ ব্যাং থেকেই, এর আগের কিছু জানা আমাদের জন্য সম্ভব নয়। যখনই জগতের কোনো এক জায়গায় আমরা এভাবে আটকে যাই, আমরা বলি, সেখানটায় একটা সিঙ্গুলারিটি আছে।

প্রশ্ন হলো, জগৎ সৃষ্টি হওয়ার তত্ত্বে এই সিঙ্গুলারিটি কি কোনোভাবে এড়ানো সম্ভব? আইনস্টাইনের তত্ত্ব থেকে আমরা এমন কোনো বিশ্বজগতের ধারণা কি পেতে পারি, যেখানে কোনো সিঙ্গুলারিটি নেই? এই প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে প্রথম ধারণা পাওয়া যায় রায়চৌধুরী সমীকরণ থেকে। সেখান থেকে এটা দেখানো যায়, আমাদের মহাবিশ্বে যেকোনো দুটি বস্তুকণার চলার পথ ধরে সময়ের পেছন দিকে যেতে থাকলে সেগুলো একটা জায়গায় গিয়ে জড়ো হতে চাইছে, সেটাই বিগ ব্যাং। অমল রায়চৌধুরীই প্রথম ধারণা দেন, সিঙ্গুলারিটি এড়িয়ে যাওয়া আমাদের জন্য সম্ভব নয়। পরে ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ সালের দিকে রায়চৌধুরী সমীকরণের ওপর ভিত্তি করেই স্টিফেন হকিং ও রজার পেনরোজ এ ব্যাপার গাণিতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করেন।

তথ্যসূত্র:

১। বাঙালি বিজ্ঞানীঃ অমল কুমার রায়চৌধুরী, অভীক রায়ের প্রবন্ধ।

। বাংলার আইন্সটাইনঃ অমল কুমার রায়চৌধুরী, শরীফ মাহমুদ সিদ্দিকী, অনুপম প্রকাশনী।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।