কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা, এমন একটা সিস্টেম যেখানে মেশিনকে দিন দিন নতুন নতুন বিষয় শিখানোর জন্য অনেক বিজ্ঞানী এবং ইঞ্জিনিয়ার কাজ করে যাচ্ছেন। তারা এমন সব অ্যালগরিদম উদ্ভাবন করছেন যার মাধ্যমে আমাদের প্রতিদিনের জীবন হয়ে উঠছে আরও স্মার্ট। খেয়াল করলে দেখা যাবে প্রতিদিনই এমন না এমন কিছু আসছে যার কারণে আমাদের চারপাশের অনেক কিছু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরিবর্তন হচ্ছে, সেটা হোক শেখা, কাজ, নর্মাল লাইফ, বিনোদন ইত্যাদি।
কিন্তু কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা -এর একটি সিস্টেম ডেভেলপ করা প্রচুর জটিল। আর এই বিষয় সহজ করার জন্যই অনেক বিজ্ঞানী কাজ করে যাচ্ছেন। তারই একটা ফলাফল হিসেবে বলা যায় ‘CHICAGO’ সিস্টেমের নাম। এই সিস্টেমটি প্রেজেন্ট করেছেন স্যামুয়েল ডিলাভু (পদার্থবিজ্ঞানী, ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া)। তার এই বিষয়ে মতামত ছিল, ‘আমরা শিখছি যে কীভাবে কিছু শিখতে হয়’।
শিকাগো সার্কিট নিয়ে শুরু করার আগে আমরা প্রচলিত কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেম যেভাবে কাজ করে তা নিয়ে বুঝার চেষ্টা করি।
মেশিন লার্নিং সিস্টেমে এখনকার সবচেয়ে প্রচলিত টুলের নাম হলো নিউরাল নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্ক কম্পিউটারের মেমরিতে প্রসেস করা হয়। নেটওয়ার্কের কম্পোনেন্টগুলোকে বলা হয় ‘নোড’ আর প্রতিটা নোড একে অপরের সাথে কানেক্টেড থাকে। নোডগুলো কন্ট্রোল করা হয় ০ অথবা ১ দিয়ে এবং নোডগুলা লেয়ার আকারে সাজানো থাকে। একদম প্রথম লেয়ারে ডেটা ইনপুট নেয়ার কাজ করা হয়। মধ্য মাল্টিপল লেয়ার থাকে যা প্রসেসিং-এর কাজ করে। শেষ লেয়ারে প্রসেসড ডেটার রেজাল্ট আউটপুট দেয়া হয়।
সিস্টেমকে ট্রেনিং দেওয়ার জন্য ডাটা হিসেবে ছবি দেয়া হয় কম্পিউটারকে এবং প্রসেস করে প্রতিটি নোডে জমা করা হয়। সে অনুসারে নোডগুলো অপ্টিমাইজডভাবে সাজিয়ে রাখা হয়। ডেটা প্রসেসের পরে নেটওয়ার্কের প্রতিটি নোডে প্রতিনিয়ত আপডেট দেয়া হয়। একে বলা হয় টিউনিং। কিন্তু ইনপুট সাইজ যত বাড়ে এই কাজের ফ্লো এবং মেইন্টেনেইন্স খরচ অনেক বেশি হয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন পুরো প্রক্রিয়াকে একটি ফিজিক্যাল সিস্টেমে কনভার্ট করার জন্য, যেখানে পুরো ফ্লো আর এক্সটার্নাল ক্যালকুলেশন যা কম্পিউটার দিয়ে করানো হতো তা একটি মেশিন সম্পাদন করবে। এতে করে প্রসেসিং স্পিড, মেমরি সেভিং এবং টিউনিং নিয়ে অনেকাংশেই মাথা ব্যাথা কমে যাবে।
এই জায়গায় বাজিমাত করে শিকাগো সার্কিট। ১৬টা আলাদা আলাদা অ্যাডজাস্টেবল রেজিস্টর বা রোধকে তার দ্বারা সংযুক্ত করে একটি নেটওয়ার্কের মতো বানানো হয়েছে, যেখানে প্রতিটি রোধের লিডের কানেশন নোড হিসেবে এবং রোধ কাজ করে নেটওয়ার্কের পাথ হিসেবে। নেটওয়ার্কটি চালানোর সময় কিছু নোডের মধ্য ভোল্টেজ ইনপুট দেয়া হয় তারপর আউটপুট নোডের ভোল্টেজ ক্যালকুলেশন শেষে সংগ্রহ করা হয়। এই সিস্টেমকে কম কম্পিউটেশন পাওয়ার আর মেমরি দিয়ে ট্রেনিং-এর জন্য দুটি সার্কিট মার্জ করে একটি সার্কিটে কনভার্ট করা হয়েছে। এতে করে এখন সিস্টেমে দুইটি নেটওয়ার্ক। প্রথম নেটওয়ার্ককে বলা হয় ‘ক্ল্যাম্পড নেটওয়ার্ক’ দ্বিতীয়টিকে বলা হয় ‘ফ্রি নেটওয়ার্ক’। প্রথম দিকে ক্লাম্পড নেটওয়ার্ক -এর ইনপুট এবং আউটপুট ভোল্টেজ ফিক্সড করা হয়েছিল আর ফ্রি নেটওয়ার্কের শুধু ইনপুট ভোল্টেজ ফিক্স করা হয়েছিল আর আউটপুটকে ফ্রি করে দেয়া হয়েছে ক্যালকুলেশনের রেজাল্ট পাওয়ার জন্য। কিন্তু প্রথমে এই প্রসিডিউর মেইন্টেইন করে সিস্টেমে আউটপুট ঠিক মতো পাওয়া যায়নি। তখন এই সিস্টেমে কিছু অ্যাডজাস্টমেন্ট নিয়ে আসা হয়, ক্লাম্পড নেটওয়ার্ক ও ফ্রি নেটওয়ার্কের আপ-ডাউন ভোল্টেজের ভিত্তিতে সার্কিটটিকে স্ট্যাবল করা হয়। তখন এই সার্কিটে আউটপুট ঠিকমতো আসা শুরু করে। ফিজিক্যাল সিস্টেমটি রেডি হয়ে যাবার পরে, টিউনিং-এর ক্ষেত্রে খুবই কম কম্পিউটেশন মেমরি দরকার হচ্ছিল। যেহেতু এখন সিস্টেমটি ফিজিক্যালভাবেই কাজ করছে আর এই কাজটা করা হয়েছে ছোট একটা মেশিন দিয়ে যার নাম কম্পারেটর। কম্পারেটরের সাহায্য দুইটা নেটওয়ার্ক-এর আপ ডাউন ভোল্টেজ ট্রাক রেখে সে হিসেবে টিউনিং হয়। এই হচ্ছে পুরো সার্কিট এর কাজের সারমর্ম।
ডিলাভ্যু মিটিং-এ আরও বলেন, এই সার্কিটের সাহায্য বিভিন্ন ধরনের কাজ করা যায়। যেমন: কোন ফুলগাছের পাঁপড়ি আর বৃতাংশ এর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ দেখে ফুল গাছ শনাক্ত করতে পারে। এমনকি এই শনাক্তকরণে এই মেশিনের অ্যাকুরেসি ৯৫%! এই টেস্ট করা হয়েছে ক্যানোনিক্যাল বেইসড AI Standard প্রসিডিউর -এর সাহায্য। এই টেস্টের জন্য ১৫০ সেট ছবি ব্যবহার করা হয় আর এর মধ্য ইনপুট দেয়া হয়েছিলো মাত্র ৩০ সেট ছবিকে।
এই উদ্ভাবন নিশ্চয়ই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তায় অন্য গতি এনে দিবে। কারণ এই পুরো সার্কিটকে মাইক্রোচিপ আকারে নিয়ে আসা সম্ভব আর এটি মাইক্রোচিপ আকারে চলে আসলে নিউরাল নেটওয়ার্কের নতুন যুগ চলে আসবে এবং তখন এই চিপের সাহায্যে হয়তো আরও জটিল প্রবলেম সলভ করা সম্ভব হবে। হয়তো আমরা আরও চমক দেখতে পারব প্রযুক্তির দুনিয়ায়।