Skip to content

Tachyon

বাংলায় বিজ্ঞান গবেষণায় প্রথম উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম

ভয়ংকর স্যাটেলাইট

ক্রায়োস্যাট-২ স্যাটেলাইট পৃথিবী পৃষ্ঠ হতে ৭০০ কিলোমিটার উপরে নিজ অক্ষে আবর্তন করছিল। ঠিক সেই সময় মহাকাশে ছড়িয়ে থাকা অন্য স্যাটেলাইটের ধ্বংসাবশেষ এসে সংঘর্ষে লিপ্ত হবে হবে এমন পরিস্থিতি। সংঘর্ষের আগেই ২রা জুলাই European Space Agency (ESA) এই খবর জানতে পারেন। আর ৯ জুলাই উচ্চতর অরবিটে পাঠানোর জন্য স্যাটেলাইটকে বুস্ট দেওয়া হয়। ধ্বংসের মুখ থেকে বেঁচে যায় ক্রায়োস্যাট-২।

কী ভাবছেন, এই সমস্যার সমাধান কি এতটাই সহজ? আসলে না। কারণ এর আগেও অনেক স্যাটেলাইটের সংঘর্ষ ঘটেছে এবং দিন দিন সংঘর্ষের ঝুঁকি বেড়ে চলেছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে স্যাটেলাইটের ট্রাফিক জ্যাম। এখন স্পেইসে স্যাটেলাইটের অভাব নেই।

শুধু ২০১৭ সালেই কমার্শিয়াল কোম্পানি, মিলিটারি, সিভিল ডিপার্টমেন্ট এবং যারা নতুন তারা ২০০০-২০১০ সালের মোট স্যাটেলাইটের সংখ্যা থেকে ৪ গুণ বেশি স্যাটেলাইট লঞ্চ করে। এমন অনেক কোম্পানি রয়েছে যেমন- Boeing, Oneweb এবং SpaceX প্রভৃতি। বর্তমানে মেগা কনস্টেলেশন প্রজেক্টের মাধ্যমে মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর হিড়িক উঠেছে। মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানোর এই প্রতিযোগিতা আরও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে বলছেন গবেষকরা।

২০০৯ সালে US Iridium Satellite-এর সাথে রাশিয়ান কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট cosmos-2251-এর সংঘর্ষ ঘটে। এর ফলে প্রচুর পরিমাণ আবর্জনা সৃষ্টি হয় যা বাকি স্যাটেলাইটের জন্য হুমকিস্বরূপ। এছাড়া আরও কৃত্রিম পদার্থ (২০ হাজারেরও বেশি) স্পেসে অবস্থান করছে, যেমন: সোলার প্যানেল, রকেটের টুকরো ইত্যাদি।

ক্রায়োস্যাট-২ এর মতো সবসময় স্যাটেলাইটকে বুস্ট দেওয়া সম্ভব না। কেননা তা সময়সাপেক্ষ এবং প্রচুর জ্বালানি দরকার। জ্বালানি বেশি খরচ হয়ে গেলে স্যাটেলাইটের মুখ্য কাজটাই করা হবে না। যদিও অনেক দল এই সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।

কেউ কেউ স্যাটেলাইটের সিস্টেম উন্নত করার প্রস্তাব দিয়েছেন যাতে স্যাটেলাইট দূর থেকে বস্তুর আকার এবং আকৃতি চিহ্নিত করতে পারে। এরপর সেই আকার আকৃতি অনুসারে নিজেই নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে নিতে পারে। অন্যরা বিশেষ অরবিট খোঁজার জন্য ট্রাই করছেন। তাদের চিন্তাটা এমন যে মিশন শেষ হওয়ার পর তারা স্যাটেলাইট সেখানেই অবস্থান করবে এবং বার্ন-আপ হবে। কিন্তু অনেক বিজ্ঞানীদের মতে এই বিকল্প পন্থাগুলো সম্ভব না। কিছু অনিয়ন্ত্রিত স্পেস ক্র্যাশ অধিক পরিমাণ ধ্বংসাবশেষ উৎপন্ন করতে পারে।

জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক রিসার্চার ক্যারোলিনের মতে “এভাবে চলতে থাকলে, ফিরেও যাওয়া সম্ভব না।” প্রশ্ন জাগতেই পারে, মহাকাশের এই অবস্থার শুরু আসলে কীভাবে হলো?

১৯৬০ সালে ইউএস মিলিটারি প্রজেক্ট লাখ লাখ ক্ষুদ্র কপার নিডল পাঠায় স্পেইসে যাকে বলা হয় ‘West Ford Project’। ওয়াল্টার মরোউ মূলত এই প্রজেক্ট পরিচালনা করেন। কমিউনিকেশন বুস্ট পাওয়ার জন্য এই ধাপ নেওয়া হয়। কিন্তু এতে প্রচুর স্পেইস জাঙ্ক সৃষ্টি হয়।

বিজ্ঞানের ইতিহাসবিদ লিসার মতে, “এটা ছিল স্পেইস পরিষ্কার রাখার জন্য (গুরুত্ব হিসেবে) প্রথম দৃষ্টান্ত.” সাম্প্রতিক সময়ের অনেক গবেষকদের মতে, মহাকাশে থাকা ৯৫% কৃত্রিম বস্তু হচ্ছে অব্যবহৃত স্যাটেলাইট। ২০১৯ সালের দিকে ইলন মাস্ক সিদ্ধান্ত নেন গ্লোবাল ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের জন্য SpaceX ৬০টি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট লঞ্চ করবে। তবে এই ‘megaconstellations’ মহাবিশ্ব অবজার্ভেশনের জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। আবার রেডিয়ো ফ্রিকুয়েন্সির কারণে বিকৃতিও ঘটে। ছবি তোলার সময় উজ্জ্বল ধারার সৃষ্টি করে এবং অরবিটে অত্যধিক স্যাটেলাইটের কারণে সংঘর্ষের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এই স্পেইসফ্লাইট কোম্পানি স্টারলিংক স্যাটেলাইট লঞ্চ করার সিদ্ধান্ত নেয়। ঝামেলা হচ্ছে পরিমাণগত দিক থেকে বাড়ার কারণে উজ্জ্বল ধারা ততই সৃষ্টি হচ্ছে। যদিও অনেকে যেমন জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী অলিভিয়ার মতে, যদি ২৭ হাজারের মতো স্যাটেলাইট লঞ্চ করা হয় তাহলে ESO telescope এর অভজার্ভিং টাইম 0.৮% ফুরিয়ে যাবে অর্থাৎ অবজার্ভ করার সময় বাধাগ্রস্থ হবে।

কিন্তু The US Large Synoptic Survey Telescope (LSST) সিদ্ধান্ত নেয় তারা ডার্ক ম্যাটার এবং ডার্ক এনার্জি নিয়ে রিসার্চ করার জন্য রাত্রিবেলা সময় ঠিক করেছে গবেষণার জন্য (টনি টাইসনের মতামত); শুধু অবজার্ভিং টাইম অপচয় হবে তা নয়। উজ্জ্বল স্যাটেলাইট দ্বারা ক্যামেরার সেন্সরকে স্যাচুরেট এবং ভুল সংকেত প্রদান কররার সম্ভাবনা থেকে যাবে। এই সমস্যা বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে হয়, তখন স্যাটেলাইট আরও দৃশ্যমান হয়, যা LSST এর জন্য বাধাস্বরূপ।

স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইটগুলি পাখির পালক অথবা ট্রেন আকৃতির আলোকগুচ্ছের মতো দেখায়

এছাড়া রেডিয়ো ইনফারেন্স অনেক ধরনের বাধা সৃষ্টির কারণ। স্যাটেলাইটগুলো গ্রাউন্ড স্টেশনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ফ্রিকুয়েন্সি ব্যবহার করে; যা রেডিয়ো অ্যাস্ট্রোনোমি অবজার্ভেশনের জন্য বাধাস্বরূপ।

স্যাটেলাইট কমিনিউকেশনের জন্য যে যে তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করা হয়, তা রেডিয়ো এস্ট্রোনোমাররাও মহাবিশ্ব পর্যবেক্ষণে এই তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে থাকেন। স্টারলিংক -এর মতো কোম্পানিগুলো এখনও এর সমাধান খুঁজে পায়নি। SpaceX সমস্যা সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিলেও ‘ন্যাচার’ জার্নালের অনুসন্ধানের মতে তাদের সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছে।

লম্বা কাহিনী যদি ছোট্ট করে বলি, স্যাটেলাইটগুলোর অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে টেলিস্কোপ দিয়ে মহাকাশ পর্যবেক্ষণে বাধা আসে এবং স্পেইস জাঙ্কের কারণে স্যাটেলাইটের সংঘর্ষ হলে অনেক ক্ষতি হয়। যার সমাধান এখনো পাওয়া দুষ্কর।

তথ্যসূত্র

  1. Witze, A. (2018). The quest to conquer Earth’s space junk problem. Nature, 561(7721), 24-27.
  2. Witze, A. (2019). SpaceX launch highlights threat to astronomy from’megaconstellations’. Nature, 575(7782), 268-270.
  3. Witze, A. ‘Unsustainable’: how satellite swarms pose a rising threat to astronomy. Nature.
  4. Witze, A. (2020). How satellite’megaconstellations’ will photobomb astronomy images. Nature.

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।