১. উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে বিভিন্ন চুম্বকক্ষেত্রের প্রভাব :
টবে বীজ লাগানোর পর সেই টবের মধ্যে একটা ছিদ্রযুক্ত রিং-চুম্বক এমনভাবে বসাবেন যেন বীজটা একদম মাঝখানে থাকে। এভাবে বিভিন্ন মাত্রার শক্তিশালী এবং দুর্বল চুম্বক ব্যবহার করে বীজের অঙ্কুরোদগম এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। এদের মধ্যে একটি টব থাকবে কন্ট্রোল যেখানে কোনো কিছুই প্রয়োগ করবেন না। হাইপোথিসিস অনুসারে চুম্বক ক্ষেত্রের জন্য উদ্ভিদের বিভিন্ন আয়নের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। কাজেই শক্তিশালী চুম্বকের নমুনায় বৃদ্ধি পাবার সম্ভাবনা বেশি। এটা করে দেখেতে পারেন। হয়তো নিজের মধ্যে একটু বিজ্ঞানী বিজ্ঞানী ভাব আসবে।
২. কীট পতঙ্গের ছবি তুলে নির্দিষ্ট ভৌগলিক এলাকার এলবাম তৈরি করা :
আপনার এলাকায় কত ধরনের বিভিন্ন প্রজাতির কীটপতঙ্গ আছে তা জানার জন্য ক্যারোলাস লিনিয়াসের মতন কিছুদিন বনে জঙ্গলে বা ফসলের মাঠে ঘুরে ঘুরে পোকা মাকড়ের ছবি তুলে একটা এলবাম বানাতে পারেন। পোকা শনাক্ত করার জন্য iNaturalist app ব্যবহার করবেন। তাছাড়া অনেক FB গ্রুপে এর বিশেষজ্ঞরা আছেন। তাদের সহায়তায় আপনি আপনার এলবামটা পরিপূর্ণ করতে পারেন। এমনও হতে পারে আপনার অনুসন্ধানে একটা নতুন প্রজাতি পাওয়া গেল। যেখানে ছবি তুলবেন সেখানে GPS লোকেশন খাতায় রেকর্ড করে রাখলেন এবং সেই সাথে প্রজাতিটি সম্পর্কে কিছু বিবরণ ও লিখলেন। সম্ভব হলে স্কেচ করবেন।
৩. উদ্ভিদের লবনাক্ততা সহনশীলতার পরীক্ষা :
যেকোনো নির্দিষ্ট একটা উদ্ভিদ প্রজাতি বাছাই করে প্রয়োজন মতো নমুনা তৈরি করবেন। যেমন : আপনি পনেরোটা নমুনা সংগ্রহ করলেন যেখানে সবগুলোর উচ্চতা, ভর এবং পাতার সংখ্যা সমান এবং তাতে কোনো রোগ বালাই নেই। এরপর নিম্নের পদ্বতি অনুসারে তিনটি ভিন্ন ঘনমাত্রার লবণের দ্রবণ তৈরি করবেন।
1L পানিতে 5g লবণ
1L পানিতে 10g লবণ
1L পানিতে 15g লবণ
এরপর তিনটা সারিতে পাঁচটা পাঁচটা করে মোট পনেরোটা টব সাজিয়ে তাতে গাছ লাগাবেন। সারির প্রথম টবে 5g/L লবণ পানি সেচ দিলে এর পেছনের সবগুলোয় একই রকম ডোজে সেচ দিবেন। একই রকম একই ট্রিটমেন্ট বহুবার প্রয়োগ করাকে গবেষণার ভাষায় রেপ্লিকেশন বলে। এতে ত্রুটির মান কমে যায়। এভাবে দ্বিতীয় টবে 10g/L এবং তৃতীয় টবে 15g/L নিয়ে রেপ্লকিকেশন করবেন। এভাবে আপনার পরিকল্পনা মাফিক নির্দিষ্ট সময় পর পর লবণের পানি প্রয়োগ করবেন।
কিছুদিন পর গাছের উচ্চতা, পাতার সংখ্যা, শাখার সংখ্যা, গাছের ভর, ফল এবং ফুলের সংখ্যা গণনা করে যাচাই করবেন যে কোন অবস্থাতে সেই গাছ ভালো থাকে। একটু Advance চিন্তাভাবনা থাকলে পরীক্ষণ ডিজাইন (RCBD, CRD, LSD ইত্যাদি) এবং P value, ANOVA ইত্যাদি পরিসংখ্যানগত ডাটা এনালাইসিস শিখে নিজের গবেষণার লেভেলকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারেন।
লবণাক্ততার জন্য খুলনা, বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী, কক্সবাজার ইত্যাদি উপকূলীয় অঞ্চলে ফসল জন্মায় না। কেবল হ্যালোফাইটই জন্মায়। তাই লবনাক্ততা নিয়ে একটু গবেষণা করে আপনি ধারনা নিতে পারেন যে কোন উদ্ভিদটা বেশি লবনাক্ততা সহনশীল।
৩. ফুল এবং পাতার রস থেকে মশা দমনের ঔষধ উৎপাদন :
প্রকৃতিতে এমন কিছু গাছ আছে যার থেকে বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক উদ্বায়ী পদার্থ বের হয় যা মশা পছন্দ করে না। যেমন : তুলসী, ক্যাটনিপ , ল্যাভেন্ডার , চন্দ্রমল্লিকা , লেভেন্ডার ইত্যাদি। আপনার কাজ হলো এমন উদ্ভিদ খোঁজ করা। আপনি শুরুর দিকে চন্দ্রমল্লিকার পাতা এবং ফুল বেঁটে তার রস বের করে এরপর সেটা ছেঁকে স্প্রে বোতলে রেখে স্প্রে করতে পারেন। কার্যকরি রাসায়নিক উপাদানের বিস্তারের জন্য স্প্রে মিশ্রনে অল্প সরিষার/নারেকেলের তেল মিশিয়ে নিবেন। এভাবে বিভিন্ন উদ্ভিদ থেকে বিভিন্ন নির্ঝাস বানিয়ে বাসায় স্প্রে করে দেখবেন যে কোনটা সবচেয়ে ভালো কাজ করে। এভাবে হয়ত আপনি একটি এমন একটা উদ্ভিদ পেয়ে যাবেন যার থেকে মশা দমনের জন্য কার্যকর উপাদান পাওয়া সম্ভব।
৪. উদ্ভিদ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন
উদ্ভিদ কার্বন ডাই অক্সাইড এবং পানি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের জৈব পদার্থ তৈরি করে। যার অর্ধেক উদ্ভিদ ব্যবহার করে এবং অবশিষ্ট অংশ শেকড়ের সাহায্য বের হয়ে যায়। এরপর মাটির কিছু ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক এই জৈব পদার্থ গুলো ভেঙ্গে মাটিতে প্রচুর ইলেকট্রন ছাড়ে। যেটা ক্যাপচার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। তাই এই সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে একটা micro biofuel cell তৈরি করতে পারেন। এক্ষেত্রে শৈবাল ব্যবহার করতে পারেন। যা সালোকসংশ্লেষণের পর অ্যানোডের ইলেকট্রন সর্বরাহ করতে পারে। অ্যানোড এবং ক্যাথোড ভিন্ন ধাতুর হবে। আপনি সারনির প্রজেক্টটা চাইলে দেখতে পারেন। বর্তমানে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে এটা সবচেয়ে জনপ্রিয় গবেষণার একটা লিংক প্রথম কমেন্টে। [1]
৫. প্রাকৃতি নির্দেশক :
বিভিন্ন উদ্ভিদের মধ্যে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান থাকে যা অম্ল ক্ষার নির্দেশক রূপে কাজ করতে পারে। আপনি সেগুলো সংগ্রহ করে তার নির্যাস দিয়ে কোনো দ্রবণের অম্লত্ব এবং ক্ষারকত্ব পরীক্ষা করতে পারেন। যেমন : জবা ফুলের রস।
৬. উদ্ভিদ পরিবার বা প্রজাতি শনাক্তকরণ :
Botany in a day বইটি ব্যবহার করে আপনি যেকোন স্বপুষ্পক উদ্ভিদের পরিবার কিংবা প্রজাতি শনাক্ত করতে পারেন। এছাড়াও iNaturalist app ব্যবহার করতে পারেন। এরপর এগুলোর ছবি তুলে এলবাম বানাতে পারেন। বইটা ইংরেজিতে হবার জন্যে যাদের ইংরেজির দক্ষতা আছে তারা এটা ব্যবহার করতে পারেন। সম্ভব হলে স্কেচ করবেন।
৭. পক্ষীবিদ সালিম আলীর অনুপ্রেরণা :
পক্ষীবিদ সালিম আলী ভারতবর্ষের অসংখ্য পাখির চিত্র তোলেন এবং বিবরণ লিপিবদ্ধ করে যান। ওই সময়টায় DSLR বা উচ্চ মেগা পিক্সেলের মোবাইল ক্যামেরাও ছিল না। কিন্তু এখন আপনার তা আছে। পাখির ছবি তুলে অ্যালবাম বানান আর iNaturalist app-এর সাহায্যে সেগুলো শনাক্ত করার চেষ্টা করেন। পারলে ফেসবুকের পাখি শনাক্ত করে এমন গ্রুপে বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেন। এক বছরে হয়তো আপনার নিজের একটা সুন্দর অ্যালবাম হয়ে যাবে। সম্ভব হলে স্কেচ করবেন।
৮. উদ্ভিদ প্রজনন প্র্যাকটিস :
এ্যালোভেরার বা স্নেক প্লান্টের পাতা খুলে এনে ঝুর ঝুরে মাটিতে লাগিয়ে দিলে তার থেকে শিকড় গজিয়ে গাছ হয়। আবার গোলাপ বা জবার সতেজ এক বছর বয়সী ঢালের পর্বের নিচে তীর্যক ভাবে কেটে সেটা 45° কোন করে মাটিতে পূর্ব পশ্চিম মুখী করে লাগালে সেখানেও গাছ হয়। লেবুর পাতা বোঁটা সহ বা ফেলে তার গোড়া বালির টবে লাগিয়ে রাখলে এবং সেখানে বালি সবসময় ভেজা রাখলে একসময় পাতা থেকে শেঁকড় গজায়। পাতা এবং ঢাল থেকে নতুন চারা তৈরি করতে পারেন। এক্ষেত্রে নিয়মিত দুই বেলা সেচ দিতে ভুলবেন না। এটা আপনার মনকে আরো কৌতুহলী হতে সাহায্য করবে।
৯. মাইক্রোস্কোপ :
প্রায় 20,000 টাকার মধ্যেই আজকাল ভালো মাইক্রস্কোপ পাওয়া যায়। যেটা দিয়ে প্রোটোজোয়া, ফাইটোপ্লাংটন, ছত্রাক, উদ্ভিদের টিস্যু, পেঁয়াজের মূলের মাইটোসিস বিভাজনের ধাপ ইত্যাদি সহজেই পর্যবেক্ষণ করা যায়। কাজেই হাতখরচের কিছু টাকা জমিয়ে জমিয়ে একটা দামি মোবাইল না কিনে একটা মাইক্রোস্কোপও কিনতে পারেন। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ছাত্র হন তবে তা পরীক্ষায় ভালো মাকর্স পেতে আরো বেশি কাজে লাগবে।
১০. ডিশেকশন টুলস :
আপনার বায়োলজি বইয়ের প্রাণীদের anatomy কে বাস্তবে উপলব্ধি করার জন্য মাঝে মাঝে মাছ, মুরগি, তেলাপোকা ইত্যাদির ডিশেকশন করতে পারেন। যা আপনার পড়াশোনায় সাহায্য করবে। ঘাসফড়িং পড়ার সময় কয়েকটা ঘাস ফড়িং জারে সংগ্রহ করে তাদেরকে ব্যবহার করে টপিকগুলো আরো ভালোভাবে বুঝতে পারেন। ফুলের গঠন পড়ার সময় জবা ফুল ব্যবচ্ছেদ করে তা দেখে দেখে পড়ে বুঝে পড়তে পারেন। তাতে কনসেপ্ট আরো ক্লিয়ার হয়ে যাবে। উদ্ভিদের গোত্র পড়ার আগের দিন ওই উদ্ভিদগুলো বাসায় সংগ্রহ করে রাখলেন। এরপর উদ্ভিদের গোত্রের বিবরণ পড়ে সেগুলো মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করতে পারেন।
১১. মানবদেহে :
কঙ্কাল পড়তে পড়তে মাথায় ফসা আর প্রসেসের গোলযোগ বাঁধতেই পারে। আবার হৃৎপিণ্ডের কাজ বুঝতেও সমস্যা হয়। এই সমস্যা দূর করতে বইয়ের দ্বিমাত্রিক চিত্রের ওপর নির্ভর না করে ল্যাপটপে complete anatomy software ডাউনলোড করে ফেলুন। যারা উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করেন তারা Microsoft store এ এটা সার্চ করলে পেয়ে যাবেন। এই সফটওয়্যারটা প্রতিটা ইমেইল এড্রেসের জন্য তিনদিনের ফ্রি ট্রায়েল দেয়। তাই তিনদিন পর নতুন আরেকটা ইমেইল এড্রেসে দিয়ে নতুন account করলে আরো তিন দিনের ফ্রি ট্রায়েল পাবেন। নতুন নতুন ইমেইল তৈরির জন্য একটু হ্যাকিং করতে পারেন। কিছু ওয়েভ সাইটে টেম্পোরারি ইমেইল তৈরি করে। সেগুলো ব্যবহার করে বার বার নতুন account খুলে সারাবছর complete anatomy software ব্যবহার করতে পারবেন। তবে যখন পড়তে বসবেন তখন ব্যবহার করলেই যথেষ্ট। এমন একটা ওয়েব সাইট হলো Temp mail। লিংক কমেন্টে [2]
১২. iNaturalist app এবং ওয়েবসাইট :
বায়োলজি শেখার উৎসাহ বাড়তে এই অ্যাপের বিকল্প নাই। পৃথিবীর প্রতিটা মহাদেশের সকল প্রাণী ও উদ্ভিদ এবং নিম্ন শ্রেণীর জীবের অসংখ্য ছবি এবং বিস্তারিত বিবরণ এখানে পেয়ে যাবেন। এক ক্লিকেই লক্ষাধিক জীবের ছবি এবং বিবরণ আপনার সামনে চলে আসবে। চাইলে সারাদিন ছবিও দেখতে পারেন কিংবা প্রাণীদের বা উদ্ভিদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন। এই এপ দিয়ে আপনার ক্যামেরায় তোলা ছবির মাধ্যমে কোনো অজানা প্রাণী বা উদ্ভিদকে শনাক্ত করতে পারেন। অ্যাপটা কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা জানতে চাইলে আমার সাহায্য নিতে পারেন।
সংযুক্তি : [1] https://youtu.be/eBCFDDCaFOU [2] temp-mail.org/en/
One comment on “বায়োলজি ভীতি দূর করার উপায়”
🖤