Skip to content

Tachyon

বাংলায় বিজ্ঞান গবেষণায় প্রথম উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম

মহাবিশ্ব সৃষ্টির সামান্য পরেই তৈরি হয়েছিল যে নক্ষত্র

লেখক : কে. এম. শরীয়ত উল্লাহ

১৯১২ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আমাদের পৃথিবী থেকে প্রায় ২০০ আলোকবর্ষ দূরে তুলা নক্ষত্রমণ্ডলে একটি নক্ষত্র আবিষ্কার করেন। এর নাম দেওয়া হয় মেথুসেলাহ। ক্যাটালগে এর নাম HD 140283 । তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই নক্ষত্রটির বয়স পরিমাপ করে পাওয়া গেছে ১৪.৪৬ বিলিয়ন বছর যা আমাদের মহাবিশ্বের বয়সের (১৩.৭৮৭ বিলিয়ন বছর) চেয়ে বেশি! এটি কীভাবে সম্ভব যে আমাদের মহাবিশ্বের অভ্যন্তরের একটি নক্ষত্র স্বয়ং মহাবিশ্ব সৃষ্টির আগেই সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে?

আসল কথা হচ্ছে এটি সম্ভব না এবং এই নক্ষত্রটির বয়স আসলে ১৪.৪৬ বিলিয়ন বছরও নয়। তাহলে কাহিনী কী?

অনেকে মেথুসেলাহকে মহাবিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো নক্ষত্র হিসেবে বিবেচনা করে। তবে আসলে এটি সবচেয়ে পুরোনো নক্ষত্র নয়। বরং এর থেকেও আদিকালে নক্ষত্র গঠন হওয়া সম্ভব। একটি নক্ষত্রের কত বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল তা বের করতে আমাদের তিনটি বিষয় জানতে হয়। (ক) নক্ষত্রের দীপন তীব্রতা (আরো সহজে বললে নক্ষত্রের উজ্জলতা) (খ) পৃথিবী থেকে ঐ নক্ষত্রের দূরত্ব (গ) ঐ নক্ষত্রের মধ্যে থাকা ধাতুগুলোর পরিমাণ।

নক্ষত্রের উজ্জলতা আমরা খুব সহজেই পরিমাপ করতে পারি। পৃথিবী থেকে নক্ষত্রের দূরত্ব পরিমাপ করার জন্য অনেক পদ্ধতি আছে, এর মধ্যে প্যারালাক্স একটি উল্লেখযোগ্য পদ্ধতি। এরপর বাকি রইল নক্ষত্রে ধাতুর পরিমাণের ব্যাপারটা। একটি নক্ষত্রের কী কী ধাতু আছে তা স্পেকট্রস্কপি নামক পদ্ধতির সাহায্যে খুব সহজেই বের করে ফেলা যায়। তারপর ঐ নক্ষত্রে হাইড্রোজেনের থেকে ভারী কী কী মৌল আছে তা চিহ্নিত করা হয়। সেই সকল মৌলগুলোর পরিমাণকে হাইড্রোজেনের পরিমাণ দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় মেটালিসিটি বা ধাতবতা। এটিই আমাদের তিন নং পয়েন্ট ছিল।

আমাদের মহাবিশ্বে প্রথমদিকে যে নক্ষত্রগুলো গঠিত হয়েছিল তা অধিকাংশই হাইড্রোজেন দ্বারা গঠিত। এর কারণ আমাদের মহাবিশ্বে শুরুর দিকে কেবলই হাইড্রোজেন ছিল। তখনও ফিউশন হয়ে হিলিয়াম তৈরি হয়নি। যেই ধরনের নক্ষত্রগুলো প্রায় সমস্ত অংশই হাইড্রোজেন দিয়ে তৈরি তাদের বলা হয় পপুলেশন III নক্ষত্র। এদের মেটালিসিটি প্রায় ১। এখন পর্যন্ত পপুলেশন III নক্ষত্র আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। এই ধরনের নক্ষত্র এখনো তাত্ত্বিকই রয়ে গেছে।

ধারণা করা হয়, এই পপুলেশন III নক্ষত্রের সুপারনোভা বিস্ফোরণের অবশেষ থেকেই হাইড্রোজেনের তুলনায় ভারী মৌল বিশিষ্ট নক্ষত্র তৈরি হয়েছে। তাদেরকে বলা হয় পপুলেশন II নক্ষত্র। মেথুসেলাহ এই পপুলেশন II নক্ষত্র। অর্থাৎ, মহাবিশ্বের সৃষ্টি লগ্নেই মেথুসেলাহ সৃষ্টি হয়েছে এমন বলা ভুল হবে।

২০১৩ সালে বিজ্ঞানীদের একটি দল এই মেথুসেলাহ নক্ষত্রটি নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করেন ও এর বয়স বের করেন বিলিয়ন বছর। (Bond et al. 2013) এখানে লক্ষ্য রাখার মতো বিষয় হচ্ছে, এর বয়স কিন্তু সরাসরি ১৪.৪৬ বিলিয়ন বছর নয়। বরং এর বয়সের পরিমাপে একটি ক্রুটি আছে। এই ক্রুটির মান ০.৮০ বিলিয়ন বছর। এই ক্রুটি এসেছে আমাদের পরিমাপে ক্রুটি ও যান্ত্রিক ক্রুটির কারণে। এই ক্রুটি গণণায় ধরলে মেথুসেলাহের বয়স হবে ১৩.৬৬ বিলিয়ন বছর থেকে ১৫.২৬ বিলিয়ন বছরের মধ্যে। সর্বনিম্ন বয়সটি আমাদের মহাবিশ্বের বয়সের সমান হলেও সর্বোচ্চ বয়সটি আমাদের মহাবিশ্বের বয়সের থেকে বেশি দেখাচ্ছে। তো, এখানে আসলে আমরা যা দেখছি, মহাবিশ্বের আগে নক্ষত্রটি সৃষ্টি হওয়ার যে ধারণা তা কেবলই আমাদের ক্রুটির ফল। এর সাথে জ্যোতির্বিজ্ঞানের কোনো সম্পর্ক নেই।

তথ্যসূত্র

Bond, H. E., Nelan, E. P., VandenBerg, D. A., Schaefer, G. H., & Harmer, D. (2013). HD 140283: A star in the solar neighborhood that formed shortly after the Big Bang. The Astrophysical Journal Letters, 765(1), L12.

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।