Skip to content

Tachyon

বাংলায় বিজ্ঞান গবেষণায় প্রথম উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম

ভার্চুয়াল কণা আসলে কণা না!

ভার্চুয়াল কণা বা অবাস্তব, অশরীরী কণা কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্সের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এর কোন অস্তিত্ব নেই। একে শুধু গনিতেই পাওয়া যায়।

কণার যুক্তি

ভার্চুয়াল কণার পক্ষে বিপক্ষে তর্ক করতে গেলেই আপনি যদি বিপক্ষ দলে থাকেন আপনাকে একটি যুক্তি শোনানো হবে। তা হচ্ছে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার নীতি। এ নীতি অনুসারে, বস্তুর ভরবেগ ও অবস্থান আপনি কখনো এক সাথে সঠিকভাবে নির্নয় করতে পারবেন না। ভরবেগ আর অবস্থানকে বলা হয় পরষ্পরের অনুবন্ধী চলক (conjugate variable)। এমন আরো কিছু অনুবন্ধী চলক আছে যেমন: (শক্তি, সময়), (কৌণিক ভরবেগ, কৌণিক সরণ) ইত্যাদি। ভার্চুয়াল পার্টিকেলের ধারণাটা মূলত আসে শক্তি, সময়ের অনুবন্ধীতা থেকে। স্পেসের কোন পয়েন্টকে আপনি যদি স্টপওয়াচ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন, যত কম সময়ের পার্থক্যে আপনি পয়েন্টটির উপর পরীক্ষা চালাবেন তত ওই পয়েন্ট এ থাকা শক্তির পরিমাণ সম্পর্কে আপনার নিশ্চয়তা কমে যাবে। মানে যত নিখুঁতভাবে শক্তি মাপতে যাবেন, তত ঝামেলায় পড়বেন। এমনও সম্ভাবনার সৃষ্টি হতে পারে যে সেখানে এতটুকু শক্তি আছে যার দ্বারা একটি ইলেকট্রনের সৃষ্টি সম্ভব। ফলে সেখানে একটি ইলেকট্রন ও একটি পজিট্রনের সৃষ্টি হবে। তা পুনরায় মিলিত হয়ে শক্তির উদ্ভব ঘটাবে। ওই যে ক্ষণিকের জন্য ইলেকট্রন ও পজিট্রন এর সৃষ্টি হয়েছিল, একে আমরা বলি ভার্চুয়াল পার্টিক্যাল।

আসলে বিষয়টি এতটাও সোজা নয়। চলুন ব্যাখ্যা করি।

কণার বিপক্ষের যুক্তি

আপনি একটি ফুটবল লাত্থি মারলেন আপনার সামনে থাকা একটি বার (bar) বড়াবড়। নিউটনীয় গতিবিদ্যার সূত্র অনুসারে বলটির উপর বাহ্যিকভাবে কোন ফোর্স প্রয়োগ না করলে বলটি সোজা সরলপথে বারের ভেতর গিয়ে পৌঁছাবে। কিন্তু কোয়ান্টাম জগতে বিষয়টি একটু বিভ্রান্তিকর। যদি ফুটবলের জায়গায় কোন পারমানবিক কণা নিতাম? আর সোজা শুট করতাম বারের দিকে? কী হতো? প্রকৃতপক্ষে ভিন্ন কিছুই হবে না। কণাটি সরলপথেই যাবে। মূল সমস্যাটা হচ্ছে কোয়ান্টাম জগত সম্ভাবনাময়। যদি আপনি ওই কণা সম্পর্কে পূর্বেই তার গতিপথ ক্যালকুলেট করে রাখতেন আপনি দেখতে পেতেন কণাটি সরলপথে যাওয়ার যেমন সম্ভাবনা আছে ঠিক তেমনি শুটার থেকে বের হয়ে আপনার বাড়ি হয়ে বারের ভেতর প্রবেশ করারও একটা অশূন্য সম্ভাবনা আছে। কিন্তু কেন কণাটি সরলপথেই বারে ঢুকলো? এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন পদার্থবিজ্ঞানী ‘রিচার্ড ফ্যাইনম্যান’। তিনি একটা যুগান্তকারী পদ্ধতি আবিষ্কার করলেন যার নাম ‘Feynman’s path Integral Method’। তিনি গানিতিকভাবে প্রমাণ করলেন কণাটি যত গুলো ভিন্ন ভিন্ন রাস্তায় (path) বারের ভেতর প্রবেশ করতে পারে তা সব নাকচ হয়ে যায় এবং সরলরৈখিক পথে বারে প্রবেশ করে।

তিনি তার এই পদ্ধতি আবিষ্কার এর মাধ্যমে পথ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান তো করতে পারলেন কিন্তু আরেকটা সমস্যা থেকেই গেল।

দেখা গেল, যে পথ ধরে কণাটি এগোচ্ছে সেই পথে যত মিথস্ক্রিয়া (Interaction) সম্ভব তা সবই ঘটার সম্ভাবনা, একে অপরকে নাকচ করে না। তা ঘটেই।

সম্পূর্ণ বিষয়টি একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝা যাক, ধরুন আপনি একটি হাইওয়ে পাড় হবেন। এখন আপনি ইচ্ছা করলে একটু ডান দিকে যেয়ে অথবা একটু বাম দিকে যেয়ে অথবা ফ্লাইওভার এ উঠে রাস্তাটা পাড় হতে পারেন। কিন্তু path integral অনুসারে আপনি সরলপথেই রাস্তাটি পাড়ি দিবেন। তা আমরা জানতে পারি। কিন্তু সমস্যাটা হলো রাস্তা পাড় হওয়ার সময় আপনি নিরাপদে পাড় হতে পারে, অথবা ট্রাক এসে ধাক্কা দিতে পারে অথবা সাইকেল এসে ধাক্কা দিতে পারে নয়ত রিকশা এসে ধাক্কা দিতে পারে। রিচার্ড ফ্যাইনম্যান এর মতে এই সব ঘটনাই আপনার সাথে ঘটবে অথবা ঘটার অশূন্য সম্ভাবনা আছে।

ঠিক তেমনি একটি ইলেকট্রন যখন চলাচল করে তখন তা ২টি ফোটনে পরিনত হতে পারে বা ১টি ফোটন ত্যাগ করে আবার গ্রহন করতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে দিন শেষে মোট শক্তি, ভরবেগ একই থাকতে হবে। ওই যে অল্প সময় এর জন্য একটি ফোটন ত্যাগ করেছিল ইলেকট্রনটি, ওটাই ভার্চুয়াল পার্টিক্যাল। কিন্তু একটা বিষয় লক্ষ করুন, এটি ইলেকট্রনের Interaction ছাড়া আর কিছুই না। এমন লক্ষ লক্ষ মিথস্ক্রিয়া হতে পারে একটি ইলেকট্রনকে ঘিরে। আমরা যখন পরিমাপ করি তখন কিন্তু এই সব ভার্চুয়াল পার্টিকেলগুলোর হদিস পাই না। পূর্বের ইলেকট্রন ও পরের ইলেকট্রন এর মধ্যে কোন পার্থক্য পাই না। জানতে পারি না যে মাঝ সময়ে ওই কনার সাথে কিছু হয়েছে কিনা। মিথস্ক্রিয়ার পূর্বের ও পরের অবস্থা আমাদের জানা থাকলেও মাঝখানের সময়টা আমাদের কাছে ধোঁয়াশাময়।

ফ্যাইনম্যানের ওই অশুন্য সম্ভাবনা যুক্ত মিথস্ক্রিয়াগুলোকে বোঝাতে ওই সব অবাস্তব কণার অবতারণা করা হয় এতে গানিতিক জটিলতা তো কমেই সাথে বোঝানো সহজ হয়। বিখ্যাত ‘Feynman Diagram’ এই সহজে বোঝানোর প্রচেষ্টারই ফল।

তাহলে শূন্যস্থানে খুঁজলে কি ভার্চুয়াল পার্টিকেল পাবো না?

মোটা দাগে, “না”। শুন্যস্থানে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার নীতি অনুসারে কিছু শক্তি থাকে, শক্তির বাহক ফোটন আর ফোটন তার চলার পথে যত কাহিনি ঘটানো সম্ভব সব ঘটাতে পারে। এক জোড়া matter-antimatter কণা তৈরি করতে পারে, দুই জোড়া matter-antimatter তৈরি করতে পারে, যার সম্ভাবনা আছে। পরিমাপ করতে গেলেই দেখবো ওখানে ফোটন ছাড়া কিছুই নেই।

হকিং রেডিয়েশন, ক্যাসিমির ইফেক্ট-এ কি হয় তাহলে?

এগুলো ভার্চুয়াল পার্টিকেল দিয়ে আংশিক ব্যাখ্যা করা যায় ঠিকই। কিন্তু তা মূল মেকানিজম না। স্টিফেন হকিং তার ১৯৭৫ সালের “Particle creation by Blackholes” পেপারে কোনরূপ কণা দিয়ে হকিং রেডিয়েশনের ব্যাখ্যা দেন নি, যদিও তিনি তার বই গুলোতে কণা দিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এর কারণ শুধুই পাঠকদেরকে সহজে বোঝানো।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।