ইউরেনাস আমাদের সৌরজগতের সপ্তম গ্রহ, আকারে পৃথিবীর চার গুণ! হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম দ্বারা প্রায় সম্পূর্ণরূপে গঠিত গ্রহটি যেন জমাট বরফের গোলা! পৃথিবীসহ সৌরজগতের অন্য গ্রহগুলো যেখানে নিজ অক্ষরেখার চারপাশে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘোরে সেখানে ইউরেনাস এর উল্টো দিকে ঘোরে। অবশ্য শুক্র গ্রহও ইউরেনাসের মতো উল্টো দিকে ঘোরে। অর্থাৎ এই গ্রহ দুটি ঘোরে ঘড়ির কাঁটার দিকে। ইউরেনাসের অক্ষের কৌণিক বিচ্যুতির জন্যে (৯৮ ডিগ্রি) মূলত এটি উল্টো দিকে ঘুরছে বলে মনে হয়। শনি গ্রহের মতো ইউরেনাসের চারপাশেও বলয় রয়েছে। আর সেখান থেকে বের হয়ে আসছে এক্স-রে! সম্প্রতি নাসার জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা Chandra x-ray observatory ব্যবহার করে ইউরেনাস থেকে প্রথমবারের মতো এক্স-রে শনাক্ত করতে পেরেছে! আমাদের সৌরজগতের এই রহস্যময় বরফ জায়ান্ট গ্রহ সম্পর্কে এই ফলাফলটি আমাদেরকে নিঃসন্দেহে আরও জানতে সাহায্য করবে।
সৌরজগতে ইউরেনাসের অস্তিত্ব জানতে লেগে যায় অনেক সময়। জ্যোতির্বিজ্ঞানী জন ফ্লামস্টিড এই গ্রহকে ছয় বার দেখেছিল বলে বলা হয়ে থাকে। জ্যোতির্বিজ্ঞানী পিয়েরে লেমােনিয়ার ১৭৫০ থেকে ১৭৬৯ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ১২ বার ইউরেনাসকে সৌরমণ্ডলে ঘুরপাক খেতে দেখেছিল। প্রথমে একে গ্রহ ই ধরা হতো না। মনে করা হতো ইউরেনাস কোনও একটি ধূমকেতু। পরে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন যে না, ইউরেনাস ধূমকেতু নয়, বরং সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণরত একটি গ্রহ। পরিধির দিক থেকে সৌরজগতের তৃতীয় বৃহত্তম গ্রহ, আবার ভরের বিচারে চতুর্থ। গ্রহটির বরফ ও গ্যাসের পিণ্ড ধারণের সঙ্গে নেপচুনের আবার মিল রয়েছে।
মহাকাশবিজ্ঞানীরা এ সম্পর্কে অবশ্য বলেছে যে, সূর্য থেকে অনেক দূরে থাকায় এই গ্রহের তাপমাত্রা খুবই কম। ইউরেনাসের নানাবিধ এসব বৈশিষ্ট্যের জন্য গ্রহটি সম্পর্কে আগ্রহ প্রকাশ করতে থাকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। সেই ২০০২ সাল থেকে ইউরেনাসকে নিয়ে চর্চা শুরু করছে চন্দ্রা এক্স-রে অবজারভেটরি। এর আগে ভয়েজার ২ মহাকাশযান সর্বপ্রথম ইউরেনাসের কাছে যায়। বর্তমানে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা চন্দ্রা এবং হাবল স্পেস টেলিস্কোপের মতো দূরবীনগুলির উপর নির্ভর করে এই দূরবর্তী এবং শীতল গ্রহটি সম্পর্কে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। গবেষকরা Chandra x-ray observatory ব্যবহার করে ইউরেনাসের ২০০২ সালের তথ্য এবং ২০১৭ সালের তথ্য পর্যবেক্ষণ করেন। সম্প্রতি তারা তাদের পর্যবেক্ষণ থেকে এক্স-রে সম্পর্কে একটি স্পষ্ট সনাক্তকরণ দেখায়। তবে কী কারণে এক্স-রে রশ্মি ছিটকে বেরােচ্ছে তা ঠিকভাবে বােঝা যায়নি। সাধারণত পৃথিবী বা অন্যান্য গ্রহ যারা সূর্যের চারপাশে ঘুরছে, তাদের আলােক তরঙ্গ প্রতিফলনের কারণই হলো সূর্যের রশ্মি। ইউরেনাস বহু দূরে রয়েছে। তাহলে সেখান থেকে কীভাবে আলােক তরঙ্গ প্রতিফলিত হচ্ছে সেটাই গবেষণা করে দেখছেন বিজ্ঞানীরা। এসম্পর্কে কয়েকটা কারণ অনুমান করা হয়েছে। শনি গ্রহের চারপাশে যেমন বলয় বা রিং আছে, তেমনি ইউরেনাসেরও আছে। নাসার দুই মহাকাশযান ‘ভয়েজার’ ও ‘ক্যাসিনি’-র পাঠানাে ছবি দেখিয়েছিল যে শনির আদিতম চওড়া বলয়গুলিতে কয়েক লক্ষ-কোটি বছর আগে যে-পরিমাণ কণা বা কণিকা ছিল, এখন আর তা নেই। হারিয়ে যাওয়া কণাগুলি তৈরি করেছিল ‘এফ রিং’ এবং গড়ে তুলেছিল দুটি উপগ্রহ- ‘প্রমিথিউস’ আর প্যান্ডােরা’। এই খোঁজ ইউরেনাসের বলয় ও উপগ্রহগুলি জানতে সাহায্য করবে বলে জানিয়েছিল বিজ্ঞানীরা। তবে চন্দ্রা অবজারভেটরি থেকে জানা যায়, ইউরেনাসের চারপাশে ঘুরছে তড়িৎ ধনাত্মক ও তড়িৎ ঋণাত্মক কণার স্রোত বা প্রােটন ও ইলেকট্রন কণার স্রোত। এই চার্জড পার্টিকলগুলাে একে অপরকে ধাক্কা দিচ্ছে সব সময়। এদের সংঘর্ষেই এক্স-রে রশ্মির সৃষ্টি হচ্ছে যা গ্রহের বলয়ে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে বেরিয়ে আসছে!