Skip to content

Tachyon

বাংলায় বিজ্ঞান গবেষণায় প্রথম উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম

সারফেস ওয়েব, ডিপ ওয়েব ও ডার্ক ওয়েবের আদ্যপান্ত!

web

লেখিকা : সাদিয়া ইয়াসমিন

কিছু খুঁজছেন? Google আছে তো! বা কোনো একটা স্কিল শিখতে চাচ্ছেন? YouTube ও অন্যান্য website আছে তো! কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে কি চেক করেন? সোশাল মিডিয়া!

এসব প্রশ্নের উত্তর বিচিত্র হলেও একটা বিষয় সত্যি, সেটা হলো ইন্টারনেট বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে।

Google, Yahoo, Bing, YouTube, Quora ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা প্রায় সকল প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যাচ্ছি। এসব সার্চ ইঞ্জিন, সোশাল মিডিয়া, ব্লগ সাইট, নিউজ সাইট সবকিছু ইন্টারনেটের সাহায্যে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে পড়াশোনা, কেনাবেচা থেকে শুরু করে অফিসে-আদালতের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা হচ্ছে এই ইন্টারনেটের মাধ্যমেই। কিন্তু এই ইন্টারনেটের অাদ্যপান্ত আমরা ক’জনে জানি? আমাদের কি আদৌ জানা আছে যে, ইন্টারনেটে দৃশ্যমান জগতের বাইরে অদৃশ্যমান আরও একটি জগত রয়েছে!

অবাক হওয়ার বিষয়, ইন্টারনেটে দৃশ্যমান জগতের বিস্তার মাত্র ২% এবং অদৃশ্যমান জগতের বিস্তার ৯৮%। ইন্টারনেট কে যদি সাগরের সাথে তুলনা করা হয়, তবে চলুন ডুব দেয়া যাক ইন্টারনেটের বিচিত্র এ জগতে এবং জেনে নেওয়া যাক জানা-অজানা বিস্তারিত।

ইন্টারনেট কী?

ইন্টারনেট (Internet) হচ্ছে ইন্টারকানেক্টেড নেটওয়ার্ক (INTER-connected NETwork) এর সংক্ষিপ্ত রূপ।

বিশ্বের সকল কম্পিউটার গুলো যে নেটওয়ার্ক দ্বারা একে অপরের সাথে যুক্ত আছে সেটাই হলো ইন্টারনেট। ইন্টারনেট হলো অনেকগুলো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টি, যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং যেখানে আইপি (Internet Protocol) এড্রেস ব্যবহারের মাধ্যমে ডেটা আদান-প্রদান করা হয়। আমরা অনেকে ইন্টারনেট এবং ওয়েব (WWW) কে সমার্থক মনে করি, আসলে ব্যাপারটা তা না। উইকিপিডিয়ার মতে,

ইন্টারনেটের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার পরিকাঠামো কম্পিউটারসমূহের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক তথ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করে। বিপরীতে, ওয়েব ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রদত্ত পরিষেবাগুলির একটি। এটা ওয়েবপেইজ, হাইপারলিংক এবং URL-দ্বারা সংযুক্ত।

ওয়েব হল মূলত ইন্টারনেটের উপর ভিত্তিকরে গড়ে ওঠা একটা অ্যাপ্লিকেশন মাত্র। ওয়েব ব্যবহার করার জন্য ইন্টারনেট অ্যাক্সেস এবং ওয়েব ব্রাউজার থাকা প্রয়োজন।

ইন্টারনেট এবং ওয়েব কীভাবে কাজ করে?

ইন্টারনেট কে মূলত আমরা তথ্য আদান-প্রদান,তথ্য যোগাড়, শিক্ষাক্ষেত্রে, কেনা-কাটায়, যোগাযোগের মাধ্যম, বিনোদনের মাধ্যম, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্লাটফর্ম ইত্যাদি হিসেবে ব্যবহার করি। ওয়েব কীভাবে কাজ করে তা জানতে হলে আমাদের প্রথমে ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে তা জানতে হবে।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে মূলত একটি কম্পিউটার অন্য আরেকটি কম্পিউটারের সাথে কানেক্ট বা সংযুক্ত হয়। আর ওয়েবের মাধ্যমে একজন মানুষ অন্য আরেকজন মানুষের সাথে সংযুক্ত হয়।

উদাহরণস্বরূপ, বর্তমানে আমরা প্রায় সবাই ই ফেইসবুক ব্যবহার করে থাকি। ফেসবুকে একজন মানুষ পাঁচ হাজার মানুষের সাথে ফ্রেন্ড হিসেবে সংযুক্ত থাকতে পারে। এখানে ফ্রেন্ডগুলো হলো মানুষ এবং ফেইসবুক হচ্ছে একটি ওয়েব সাইট। অর্থাৎ ওয়েবই আমাদের সাথে ঐ মানুষ গুলোর সংযোগ করে দিচ্ছে। আর ইন্টারনেট আপনার কম্পিউটারের সাথে ঐসব মানুষের কম্পিউটারকে কানেক্ট করে দিচ্ছে।

একটি ওয়েবসাইটের দৃশ্য

ওয়েব ইন্টারনেটের উপর ভিত্তি করে এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে তৈরী করা হয়েছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এক কম্পিউটার অন্য কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত থাকে। আর এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে ডাটা শেয়ার করার জন্য ওয়েব একটি ব্রিজের মতো কাজ করে। ওয়েব মূলত দুটি কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য HTTP (Hyper Text Transfer Protocol) ব্যবহার করে থাকে। এককথায় ওয়েব হলো তথ্যভান্ডার, যা ইন্টারনেটে এক্সেস করার প্রাথমিক সরঞ্জাম।

ওয়েবকে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

  1. সারফেস ওয়েব (Surface Web)
  2. ডিপ ওয়েব (Deep Web)
  3. ডার্ক ওয়েব (Dark Web)

চলুন জেনে নেওয়া যাক, ওয়েবের প্রকারভেদ গুলো নিয়ে।

সারফেস ওয়েব (Surface Web) বা দৃশ্যমান ওয়েব

সারফেস ওয়েব হলো ওয়েবের দৃশ্যমান অংশ যা ইন্টারনেটে একজন ব্যবহারকারীর সচরাচর বিচরণক্ষেত্র। ব্যবহারকারীরা তাদের প্রতিদিনের ক্রিয়াকলাপে যা এক্সেস করে থাকেন তাই সারফেস ওয়েব। ইন্টারনেটের যেসব অংশ যা সাধারণভাবে সার্চ করা যায়, যা কোনো সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স করা থাকে, সাধারণ মানুষ যা সার্চ করতে পারে, ওপেন, এভেইলবল এবং সিকিউরিটি দেওয়া নেই তাই সারফেস ওয়েব। সারফেস ওয়েব যেকোনো এপস বা ব্রাউজারের মাধ্যমে সহজে এক্সেস করা যায়।

আপনি যদি গুগলে কোনো কিছু সম্পর্কে সার্চ করেন, তাহলে যেসব রেজাল্ট আসবে তাই সারফেস ওয়েব। একইভাবে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব এসব সাধারণ মানুষ ব্যবহার করতে পারে, এসব সারফেস ওয়েবের অংশ। আমরা গুগল প্লে স্টোর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ইত্যাদি মেসেজিং অ্যাপ ইনস্টল করি। হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার হলো সারফেস ওয়েবের অংশ। কিন্তু আমরা চাইলেই অন্যের তথ্য, মেসেজ এসব সহজে এক্সেস করতে পারি না। একইভাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ব্যক্তিগত তথ্য, সরকারি নথিপত্র, হাসপাতালের ডেটাবেজ এসব মানুষ গুগলে সার্চ করে দেখতে পারে না,বকারণ এগুলো সারফেস ওয়েবসাইটের অংশ না। সারফেস ওয়েব ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের (WWW) একটি ছোট অংশ। সম্পূর্ণ ইন্টারনেট বা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের মাত্র ১০% হলো সারফেস ওয়েব। ১৪ ই জুন, ২০১৫ এর এক সমীক্ষা অনুযায়ী, গুগল ইন্ডেক্স ১৪.৫ বিলিয়ন পেজের সমন্বয়ে তৈরী। আবার, worldwidewebsize.com এর হিসেব মতে ২০২০ এর নভেম্বর পর্যন্ত গুগল ও বিং এ ৫.৬৩ বিলিয়ন পেজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ডিপ ওয়েব (Deep Web)

ইন্টারনেট বা ওয়েবের গভীর অংশকে বুঝানোর জন্য ডিপ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। সারফেস ওয়েবে যেখানে একজন ব্যবহারকারী সামান্য সার্চ করে সব তথ্য সংগ্রহ করতে পারত, ডিপ ওয়েবের ক্ষেত্রে তা পারা যায় না। ডিপ ওয়েবে একজন সচরাচর ব্যবহারকারী প্রবেশ করতে চাইলে তাকে ন্যূনতম সিকিউরিটি মেনে চলতে হয়। ডিপ ওয়েব সবার জন্য উন্মুক্ত নয়, এখানে সিকিউরিটি বা নিরাপত্তাই হলো মূল বিষয়।

সাধারণভাবে Google, Bing, Yahoo ইত্যাদির মতো স্ট্যান্ডার্ড সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে ডিপ ওয়েব এক্সেস করা যায় না। ডিপ ওয়েবের কন্টেন্টগুলো সাধারণ জনগণ ব্যবহারের জন্য সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স করা নেই। প্রত্যেক সার্চ ইঞ্জিন বট ব্যবহার করে নিয়মিত ওয়েব ক্রল করে এবং নিত্যনতুন যেসব তথ্য ওয়েবে যুক্ত হয় তা খুঁজে ইন্ডেক্স বা সূচিবদ্ধ করে রাখে। কিন্তু ডিপ ওয়েবের ক্ষেত্রে তা করার সুযোগ নেই। ডিপ ওয়েবের ওয়েবসাইটসমূহ সাধারণত সার্চ ইঞ্জিন বটকে ব্লক করে রাখে। ডিপ ওয়েবের বিস্তার কতটুকু তা ধারণা করা খুবই কঠিন। পুরো ওয়েবের ৯০% এরও বেশি হলো ডিপ ওয়েব।

বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, ব্যাংক একাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য, সরকারি গোপন নথিপত্র, সায়েন্টিফিক রিসার্চের তথ্য, হাসপাতালের ডেটাবেজ, ক্লাউড স্টোরেজ এবং ডার্ক ওয়েব ও ডিপ ওয়েবের অংশ। এছাড়াও প্রাইভেট ই-মেইল, রেকর্ড,গুগল ড্রাইভ, ড্রপবক্স ফাইল, নেটফ্লিক্স সাবস্ক্রিপশন, পেইড অনলাইন কোর্স ইত্যাদি হলো ডিপ ওয়েবের অংশ। অর্থাৎ যা সবার জন্য উন্মুক্ত নয়, যা আমরা কোনো সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করলে পাব না, যাতে সাবস্ক্রিপশন করতে হয় অথবা কোনো লিংক এর মাধ্যমে কিংবা আইডি, ইউজারনেম, পাসওয়ার্ড এসব ব্যবহার করে সিকিউরিটির মাধ্যমে যা ব্যবহার করা হয় তাই ডিপ ওয়েব।

একটি বিষয় খেয়াল করলে দেখতে পাবেন, গুগল ড্রাইভে যখন আমরা কোনো ফাইল সেইভ করে রাখি তার শেয়ার অপশনে বাই ডিফল্ট পাবলিক পারমিশন দেওয়া থাকে না। ওয়েবের যে অংশে বাই ডিফল্ট পাবলিক পারমিশন দেওয়া নেই এবং যা সার্চ ইঞ্জিন খুঁজে বের করতে পারে না তাই ডিপ ওয়েবের অন্তর্ভুক্ত। এসব কারণে ডিপ ওয়েবের বেশ কিছু উপকারী দিক আছে। সবচেয়ে বড় উপকারী দিকটি হলো, এটি ব্যবহারকারীর প্রাইভেসি রক্ষা করে।

সার্ফেস ওয়েব, ডিপ ওয়েব ও ডার্ক ওয়েব

ডার্ক ওয়েব (Dark Web)

ডার্ক ওয়েব হলো একধরনের ডিপ ওয়েব। ডিপ ওয়েবের মতো ডার্ক ওয়েবও ওয়েবের অদৃশ্যমান একটি অংশ যা কোনো সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স বা সূচিবদ্ধ করা নেই।

ডার্ক ওয়েব হলো ইন্টারনেটের অনেক গভীরের অপ্রকাশিত অংশ। সাধারণত কেউ যদি কোনো ওয়েবসাইট ব্রাউজ করে, তখন আইপি অ্যাড্রেসের মাধ্যমে তাকে ট্রেস করা সম্ভব হয়। কিন্তু ডার্ক ওয়েবে সেটা সম্ভব নয়। ডার্ক ওয়েব ডিপ ওয়েবের তুলনায় অনেক ছোট। ভালো- খারাপ উভয় ধরনের কাজের জন্য ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করা হয়।তবে মূলত নিষিদ্ধ ও বেআইনি কাজের পরিমাণ বেশী হয়। এখানে যে কেউ প্রবেশ করতে পারে না। এমনকি এ অংশে সাধারণ ইউআরএল বা (.com,.gov,.org) ডোমেইন লিখে প্রবেশ করা যায় না। এতে প্রবেশের জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষ ওয়েব ব্রাউজার বা সফটওয়্যার এবং এসব ওয়েবসাইটের ডোমেইন থাকে .Onion দিয়ে।

প্রথমদিকে মূলত, নিজেদের মধ্যে একান্তে যোগাযোগের জন্য বিশেষ গোষ্ঠীর দ্বারা তৈরি হয়েছিল ডার্ক ওয়েব। ধীরে ধীরে গোপনীয়তার সুরক্ষায় এখানে আনাগোনা হতে শুরু করে অপরাধীদের। ডার্ক ওয়েবে প্রচুর সিকিউরিটি থাকার কারণে এমন সব লোকের আনাগোনা ঘটে, যারা খুবই গোপনে কাজ কারবার চালায়। যেমন সরকারি সংস্থা, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, হ্যাকার, অবৈধ ব্যবসায়ী ইত্যাদি। ডার্ক ওয়েবে নিষিদ্ধ বইপত্র, পাইরেটেড মুভি থেকে শুরু করে ভাড়াটে খুনি পর্যন্ত ভাড়া করা যায়, যারা টাকার বিনিময়ে আপনার জন্য সবকিছু করে দিতে প্রস্তুত। এছাড়াও এখানে পাওয়া যায় বিশুদ্ধ মাদক দ্রব্য, বন্দুক, পিস্তল, পর্ণোগ্রাফি ভিডিও, শিশু পর্ণোগ্রাফি, হাসপাতালের ডেটাবেজ  ইত্যাদি।

এরকমই একটি জনপ্রিয় ডার্কসাইট ছিলো সিল্ক রোড (Silk Road), এটি ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। সব ধরনের কালোবাজারি ব্যবসার আড়ত ছিল এই ওয়েবসাইট।২০১৩ সালে FBI ওয়েবসাইটিকে চিহ্নিত করে, মালিককে গ্রেপ্তার করে এবং ওয়েবসাইটটি বন্ধ ঘোষণা করে। একই বছরের শেষের দিকে, নভেম্বর মাসে সিল্ক রোড-২ নামে আরও একটি ওয়েবসাইট প্রকাশ পায়।

সিল্ক রোড নামের ডার্ক ওয়েব

এছাড়াও যেসব দেশের সরকার জনগণের বাকস্বাধীনতা হরণ করে, সেসব ক্ষেত্রে ঐসব দেশের জনগণ ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত মতামত প্রকাশ করে। ডার্ক ওয়েবে সবধরনের লেনদেন হয় ক্রিপ্টোকারেন্সি বা বিটকয়েন ব্যবহার করে।

এতক্ষণে হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ডার্ক ওয়েবে কি ভালো কিছু হয় না?

হ্যা হয়, খারাপ দিকের পাশাপাশি ডার্ক ওয়েবের ভালো দিকও আছে। এখানে আপনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বই, রিসার্চ পেপার এসব পাবেন, যা সাধারণত সারফেস ওয়েবে পাওয়া যায় না।

এছাড়াও ডার্ক ওয়েবে আছে YouTube মতোই TorTube, Facebook এর মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট Black book এবং Torch, Duck Duck Go এর মতো সার্চ ইঞ্জিন। Talk With Strangers ডার্ক ওয়েবের এমন একটি ওয়েবসাইট, যার মাধ্যমে যে কেউ রেন্ডমলি যে কারো সাথে চ্যাটিং করতে পারেন। Hidden Answers ডার্ক ওয়েবের একটি ওয়েবসাইট, যেটি অনেকটা Quora এর মতো। এই ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয় প্রশ্ন করা যায় এবং কারো প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলে তা জানানো যায়। এছাড়াও ডার্ক ওয়েবের কিছু লাইব্রেরীর ওয়েবসাইট হলো Imperial Library, Calibre Library, ParaZyte ইত্যাদি।

ডার্ক ওয়েবের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিরকম হয়ে থাকে?

আমরা প্রায় সবাই জীবনে একবার হলেও ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করেছি। ব্যবহার করি বা না করি, আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে ভিপিএন কিভাবে কাজ করে?

তার জন্য আমাদের প্রথমে জানতে হবে, আমরা ব্রাউজার থেকে সার্চ ইঞ্জিনে কোনো কিছু সার্চ করি তখন তা কিভাবে কাজ করে।

ধরুন, আপনি google.com এ যেতে চান, সেক্ষেত্রে আপনাকে কিছু ধাপ পার হতে হবে, যেমন: প্রথমে ব্রাউজারে যেতে হবে, এরপর এড্রেস বারে এড্রেসটি লিখতে হবে, তারপর এন্টার চাপতে হবে। এরপর ব্রাউজারটি সার্ভারে রিকুয়েস্ট পাঠায় যে আপনি গুগলে ভিজিট করতে চাচ্ছেন, সার্ভার সেই রিকুয়েস্ট গ্রহণ করলে আপনি স্ক্রিনে গুগল দেখতে পান। এক্ষেত্রে আপনার ফোন আর সার্ভারের মাঝে অন্য কোনো কিছু না থাকায় আপনার ফোনের আইপি এড্রেস থেকে আপনাকে সহজে ট্র্যাক করে ফেলা যাবে।

আর ভিপিএন আপনার ফোন আর সার্ভারের মাঝখানে একটা ভায়া হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ আপনি গুগলে যেতে চাইলে, সেই রিকুয়েস্ট প্রথমে ভিপিএন-এর সার্ভারে যাবে, তারপর ভিপিএন সার্ভার থেকে গুগলে রিকুয়েস্ট পাঠায়। কাজেই এক্ষেত্রে গুগল সার্ভারের মনে হবে আপনি না, ভিপিএন-এর সার্ভার থেকেই রিকুয়েস্ট পাঠানো হয়েছে। তাই গুগল সার্ভার সরাসরি আপনার আইপি পায় না। এক্ষেত্রে আপনাকে ট্র্যাক করতে হলে কয়েকটি ধাপ পার হয়ে আসতে হবে। কাজেই ভিপিএন ব্যবহার করার কারণে আপনাকে ট্র্যাক করা আগের থেকে সামান্য কষ্টকর হয়ে যাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে একটি অসুবিধা রয়েছে তা হলো ভিপিএন সার্ভারের কাছে আপনার আইপি এড্রেস থাকে এবং ক্ষেত্রবিশেষে আপনার ব্যাক্তিগত তথ্যও তাদের কাছে চলে যেতে পারে।

ডার্ক ওয়েবেও ঠিক এরকম ব্যবস্থাই রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে আসল ব্যবহারকারীকে ট্র্যাক করতে হলে অনেকগুলো ধাপ পার করে আসতে হয়। ডার্ক ওয়েবে Tor ব্রাউজারের মাধ্যমে এক্সেস করতে হয়। Tor ব্রাউজারে প্রবেশের সাথে সাথে আপনার আসল আইডেন্টিটি পালটে ফেলা হয় এবং একইসাথে আপনার অবস্থান একই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে দেখায়।কাজেই এক্ষেত্রে আসল ব্যবহারকারীকে ট্র্যাক করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। আর এরকম অতিরিক্ত সিকিউরিটির কারণে ডার্ক ওয়েব অনেক স্লো এবং একেকটা পেজ লোড হতে অনেক সময় লাগে।

ব্যবহারকারীরা কীভাবে ডার্ক ওয়েব এক্সেস করে?

ডার্ক ওয়েবে প্রবেশের জন্য সবচাইতে বেশী ব্যবহার করা হয় Tor ব্রাউজার যা The onion router এর সংক্ষিপ্ত রূপ। টর ব্রাউজার গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য টর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। টর নেটওয়ার্ক একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক সার্ভার, যা ইউএস নেভি দ্বারা উদ্ভাবিত হয়েছিল এবং বিশ্বব্যাপি ইউজারদের অনলাইনে তাদের পরিচয় লুকিয়ে রাখার জন্য এটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিলো।

যখন কোনো ব্যবহারকারী টর ব্রাউজারে কোন অ্যাড্রেস লিখে সার্চ করেন সেখানে প্রবেশ করার জন্য, ব্রাউজার তখন ব্যবহারকারীর ট্র্যাফিককে তৎক্ষণাৎ এনক্রিপটেড করে দেয় এবং সেই ট্র্যাফিককে সরাসরি ওয়েব সার্ভারের কাছে না পৌছিয়ে বিভিন্ন টর সার্ভারের মধ্যদিয়ে নিয়ে যায়। যেমন ধরুন আপনি বাংলাদেশে বসে টর ব্রাউজার ব্যবহার করে কোনো একটা ওয়েবসাইট ভিজিট করতে চাচ্ছেন। তখন টর ব্রাউজার প্রথমে আপনার ট্র্যাফিককে এনক্রিপ্ট করবে, যাতে কেউ আপনার রিকোয়েস্ট পড়তে বা জানতে না পারে। এরপর টর ব্রাউজার আপনার রিকোয়েস্টটি বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দিবে, উদাহরণস্বরুপ প্রথমে ব্রাজিলে, এরপর ভারতে, এরপর ইন্দোনেশিয়ায় এরকম করে এটি বিভিন্ন দেশের সার্ভারে রিকোয়েস্টটি পৌঁছে দিবে। যার কারণে আপনি রিকোয়েস্টটি কোথা থেকে করেছেন তা বের করা অসম্ভব।

ডার্ক ওয়েবের উপকারী দিক

ডার্ক ওয়েব মানুষের গোপনীয়তা রক্ষা করে এবং তাদেরকে নির্দ্বিধায় মত প্রকাশে সহায়তা করে। অনেক সময় বিভিন্ন সন্থাসী গোষ্ঠী বা সরকারি নজরদারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গোপনীয়তা কিছু কিছু মানুষের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে। গোয়েন্দা কিংবা আন্ডারকভার এজেন্টদের মধ্যে পরস্পরের সাথে যোগাযোগের জন্য ডার্ক ওয়েব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

ডার্ক ওয়েবের অপকারী দিক

ডার্ক ওয়েব সবার গোপনীয়তা রক্ষা করে, কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তি এই গোপনীয়তা কে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে।আর এই গোপনীয়তার সুযোগ নিয়েই ডার্ক ওয়ে অনেক ধরনের জঘন্য অপরাধ কার্যক্রম সংঘটিত হয়। ডার্ক ওয়েবে যেহেতু সবকিছু ক্রিপটোকারেন্সি তে হয়, তাই যেকোন ধরনের অপরাধ সহজে সংঘটিত হয়।বিভিন্ন ধরনের প্রাইভেট ছবি, মেডিকেলের রেকর্ড, আর্থিক বিবরণী ইত্যাদি তথ্য চুরি করে ডার্ক ওয়েবে বিক্রি করা হয়। যা অন্যের গোপনীয়তা কে নষ্ট করে এবং তাদের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাড়াতে পারে।

পরিশেষে, আপনি যদি ডার্ক ওয়েবে প্রবেশের রিসোর্স খুঁজেন, ইন্টারনেটে অহরহ পাবেন।আপনি যদি ডিপ ওয়েব বা ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করেনও তবে অবৈধ কাজকর্ম হয় এমন সব ওয়েবসাইটে থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন। ভুলক্রমে কোনো একটি ফাঁদে পড়ে যেতে পারেন, যা আপনার জীবনে ভয়াবহ অধ্যায়ের সূচনা করে দিতে পারে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।