লেখিকা : ফাহমিদা হক হৃদি
আমাদের দেশের মানুষ রাতের বেলা সাধারণত কালো আকাশ দেখে অভ্যস্ত। কেননা রাতের বেলা সূর্যের আলো পাওয়া যায় না। কিন্তু এমন অনেক দেশ আছে যেখানে রাতের বেলাতেও সবুজ, বেগুণী, লাল এসব রঙের আকাশ দেখা যায় (তবে কিছু নির্দিষ্ট সময়ে, সবসময় না)। এই দেশগুলোর অবস্থান উচু অক্ষাংশের দিকে। রাতের বেলা এমন আকাশের রঙিন হওয়ার ঘটনাকে অরোরা বা মেরুজ্যোতি বলে। এই অরোরা নিয়ে পুরাণে অনেক কুসংস্কারের কথা উল্লেখ আছে। কিন্তু সব কুসংস্কার এড়িয়ে মানুষ তার মাঝের বিজ্ঞানকে খুঁজে পেয়েছে।
অরোরা কীভাবে সৃষ্টি হয়?
আরোরা সৃষ্টি হওয়ার প্রধান কারণ হলো পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র, সূর্য এবং বায়ুমণ্ডল। আমরা জানি, পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার। কিন্তু এতো দূরত্বে থেকেও সূর্যের প্রভাব আমাদের পৃথিবীর উপর পড়ে এবং বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। সূর্য থেকে প্রতিনিয়ত ইলেকট্রন মুক্ত হয়ে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ছে এবং যখন এই মুক্ত ইলেকট্রনগুলো পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র ও বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে আসছে তখন প্রতিমুহূর্তে প্রতিক্রিয়া করছে। আমাদের পৃথিবীর উপরে বেশকিছু স্তর রয়েছে যেখানে বাতাসসহ অনেক উপাদান রয়েছে। তাই কোনোকিছুকে পৃথিবীর বাইরে থেকে ভূমিতে প্রবেশ করতে হলে এসব স্তরকে অতিক্রম করেই আসতে হবে। যখন সূর্য থেকে মুক্ত চার্জিত কণাগুলো (প্লাজমা) পৃথিবীতে আসতে চায় তখন পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র এসব কণাকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে।আমরা জানি, পৃথিবী একটি তড়িৎ পরিবাহক তাই মুক্ত চার্জিত কণাকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। (ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট কোন বস্তুকে ভূ-সংযুক্ত করা হলে পৃথিবী থেকে ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রন এসে একে নিস্তড়িৎ করে আবার ঋণাত্মক চার্জযুক্ত কোনো বস্তুকে ভূ-সংযুক্ত করা হলে বস্তুটি থেকে ইলেকট্রন এসে বস্তুটি নিস্তড়িৎ হয়।) সূর্য থেকে মুক্ত চার্জিত কণাগুলো পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের কারণে পৃথিবীর মাটিতে চলে আসতে চায়। এই চলে আসতে চাওয়ার সময় ইলেকট্রনগুলোকে ওজোনস্তরসহ বায়ুমণ্ডলকে অতিক্রম করতে হয় এবং সূর্য থেক আগত এই মুক্ত চার্জবিশিষ্ট কণাগুলো বায়ুমণ্ডলের অণু পরমাণুগুলোকে আঘাত করে এতে বায়ুমণ্ডলের অণু-পরমাণুগুলো আন্দোলিত হয়। যেহেতু পরমাণু নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান ইলেকট্রন দিয়ে গঠিত তাই যখন সূর্য থেকে আগত কণাগুলো বায়ুমণ্ডলের পরমাণুকে আঘাত করে তখন ইলেকট্রনগুলো ঘুরতে ঘুরতে উচ্চশক্তিস্তর থেকে নিম্নশক্তিস্তরে গমন করে। আবার যখন ইলেকট্রন উচ্চশক্তিস্তর থেকে নিম্নশক্তিস্তরে গমন করে তখন সেটা ফোটন বা আলোকশক্তিতে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়ায় আকাশে যখন আলো সৃষ্টি হয় তখন তাকে মেরুজ্যোতি বা অরোরা বলা হয়।
অরোরাকে কেমন দেখা যায়?
অরোরাকে মাঝেমাঝে আলোর পর্দার মতো দেখায়। তবে এরা গোলাকার, সর্পিলাকার বা বাঁকানোও হতে পারে। অরোরা সাধারণত সবুজ রঙের দেখা যায়। তবে লাল ও বেগুনি রঙের অরোরাও মাঝেমাঝে দেখা যায়। সবুজ অরোরার জন্য দায়ী হলো অক্সিজেন এবং লাল ও বেগুনি রঙের আরোরার জন্য দায়ী হলো নাইট্রোজেন
বাংলাদেশে কি আরোরা দেখা যায়?
না। কারণ বাংলাদেশের অবস্থান ২০°৩৪’ উত্তর অক্ষরেখা ২৬°৩৮’ উত্তর অক্ষরেখার মধ্যে অবস্থিত অর্থাৎ এটি প্রায় মাঝ অক্ষাংশের দেশ। তাই এখান থেকে অরোরা দেখা সম্ভব না। যেহেতু এ অঞ্চলে ভূ চূম্বকের প্রভাব মেরু অঞ্চলের মতো নয়।