লেখিকা : আবিরা আফরোজ মুনা
পারসেভারেন্স (Perseverance) একটি মঙ্গলগ্রহ পরিভ্রামক যান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা-র মার্স 2020 অভিযানের অংশ হিসাবে মঙ্গল গ্রহে পাঠাতে নকশা করা হয় এই যানটিকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি দ্বারা নির্মিত এই যানটিকে 2020 সালের 30 জুলাই উৎক্ষেপণ করা হয়। পৃথিবী থেকে 470 মিলিয়ন কিলোমিটার বা 47 কোটি মাইল পথের যাত্রা শুরু করে দীর্ঘ 7 মাসের অপেক্ষার পালার অবসান ঘটিয়ে পারসেভারেন্স এবছর (2021) 19 ফেব্রুয়ারি তার যাত্রার অবসান ঘটিয়ে লাল গ্রহটির জেজেরো নামের গভীর গর্তে (ক্র্যাটার) অবতরণ করে। অবতরণের পর থেকে একের পর এক মাইলফলক অর্জন করছে এই যানটি। এর মধ্যে অন্যতম, পারসেভারেন্স তার ছোট্ট একটি যন্ত্র দিয়ে মঙ্গলের কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করে তা থেকে শ্বাসযোগ্য অক্সিজেন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে! গত 20 এপ্রিল তারই ঘোষণা দিয়েছে নাসা।
পারসেভারেন্সের সামনের দিকে ডান পাশে 17.1 কিলোগ্রাম ভরের একটি যন্ত্র লাগানো ছিল। আকারে একটা পাউরুটি সেঁকার টোস্টারের সমান এই যন্ত্রটির নাম ‘মার্স অক্সিজেন ইন-সিটু রিসোর্স ইউটিলাইজেশন এক্সপেরিমেন্ট’ বা সংক্ষেপে মোক্সি (MOXIE)। এই যন্ত্রটির নকশা তৈরি হয়েছে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষণাগারে। যন্ত্রটি নিকেলের সংকর দিয়ে তৈরি এবং প্রায় 800 ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তাপ সহ্য করতে সক্ষম। পারসেভারেন্সে মোক্সি সংযুক্ত করার উদ্দেশ্যই ছিল মঙ্গলের কার্বন-ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে অক্সিজেন উৎপাদন করা। সেই সম্ভাবনাই বাস্তবে পরিণত হয়।
মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলের 95 শতাংশই কার্বন ডাই-অক্সাইড। বাকি 5 শতাংশ নাইট্রোজেন ও আর্গন। এর মধ্যে আর্গন হলো নিষ্ক্রিয় গ্যাস। মঙ্গলে অক্সিজেনও আছে, তবে তা মাত্রায় উপেক্ষণীয় (মাত্র শূন্য দশমিক 13 শতাংশ)। অক্সিজেন তৈরি করতে বায়ুমণ্ডলে বেশি পরিমাণে থাকা কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে বেছে নেওয়া হয়েছে। কার্বন-ডাই-অক্সাইডে একটি কার্বন ও দুটি অক্সিজেন পরমাণু থাকে। মোক্সি উচ্চ তাপে তড়িৎ বিশ্লেষণের মাধ্যমে কার্বন ডাই-অক্সাইডকে ভেঙে অক্সিজেনে পরিণত করে এবং এর সাথে উৎপন্ন কার্বন মনোক্সাইড মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে ছেড়ে দেয়। এভাবে যন্ত্রটি গত 20 এপ্রিল প্রথমবার 5 গ্রাম অক্সিজেন তৈরি করেছে। এই পরিমাণ অক্সিজেন দিয়ে একজন নভোচারী মঙ্গলের বুকে প্রায় 10 মিনিট শ্বাস নিতে পারবে। তবে মোক্সি কিন্তু এই হারে অক্সিজেন উৎপাদন করবে না। মোক্সিকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে ঘণ্টায় 10 গ্রাম অক্সিজেন তৈরি করা সম্ভব হবে। এটা ছিল যন্ত্রটির প্রথম ধাপ মাত্র। তবে মোক্সি তার প্রথম পরীক্ষায় সাফল্য দেখালেও তাতে সন্তুষ্ট নন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা আগামী দুই বছরে আরও অন্তত নয়বার যন্ত্রটির পরীক্ষা চালাবেন!
মঙ্গলে অক্সিজেন তৈরির প্রয়োজনীয়তা
মানুষ যদি ভবিষ্যতে মঙ্গলে পৌঁছায় তবে উৎপন্ন এই অক্সিজেন ব্যবহার করতে পারবে। তখন পৃথিবী থেকে অতিরিক্তি অক্সিজেন টেনে নিয়ে যাওয়ার কম দরকার হবে। মহাকাশে যেতে যে রকেট ব্যবহৃত হয়, সেই রকেট চালানোর জন্যও অক্সিজেন লাগে। অক্সিডাইজারের উপস্থিতিতে জ্বালানি পুড়িয়ে রকেট সামনে অগ্রসর হওয়ার গতি অর্জন করে। এই অক্সিডাইজার হিসেবে সাধারণ অক্সিজেনও ব্যবহার করা যায়। তাই রকেটের জ্বালানী হিসাবে ব্যবহার করা যাবে এই অক্সিজেনকে। এতে করে ভবিষ্যতে মঙ্গল থেকে অক্সিজেনকে জ্বালানী হিসেবে নিয়ে আরও দূরের কোনো গ্রহেও যাওয়া সম্ভব হবে। একটি রকেটের জ্বালানীর জন্য রকেটের ওজনের চেয়ে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি থাকতে হয়। সেই হিসাবে ভবিষ্যতে যদি চারজন নভোচারী মঙ্গলে যেতে চায়, তাহলে তাঁদের মোট 15 হাজার পাউন্ড (7 মেট্রিক টন) জ্বালানী এবং 55 হাজার পাউন্ড (25 মেট্রিক টন) অক্সিজেনের প্রয়োজন হবে। এছাড়াও মঙ্গলে থাকাকালেও অক্সিজেনের প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে চারজন নভোচারী এক বছরের জন্য মঙ্গলে অবস্থান করলে তাঁদের এক মেট্রিক টন অক্সিজেন দরকার হবে। তাছাড়া পৃথিবী থেকে 25 মেট্রিক টন অক্সিজেন নিয়ে মঙ্গলে যাওয়াটাও বেশ কঠিন ও ব্যয়বহুল। যদি মোক্সিকে ভবিষ্যতে আরও উন্নত করে এক মেট্রিক টন বা তার চেয়ে বেশি অক্সিজেন উৎপাদন করা সম্ভব হয় তাহলে ঐ পরিমাণ অক্সিজেন পৃথিবী থেকে আর টেনে নিতে হবে না। এতে মঙ্গলে যাওয়ার খরচও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এসব দিক বিবেচনা করে নিঃসন্দেহে বলা যায়, মঙ্গলে মোক্সির অক্সিজেন উৎপাদন নতুন একটি মাইলফলক!
2 comments on “মঙ্গলে তৈরি হলো শ্বাসযোগ্য অক্সিজেন”
ট্যাকিয়ন টিম ও সকল সম্পাদকদের উচিত মংগল নিয়ে মানুষকে বেশি বেশি জানানো।কি করলে, কিভাবে ও কোন উপায়ে কম সময়ে মংগলের সকল চ্যালেঞ্জ গুলো অতিক্রম করে মানবসভ্যতাকে মাল্টিপ্ল্যানেটেরি করা যায় তা নিয়ে জ্ঞান ও প্রয়োজনীয় সকল শিক্ষা দেওয়া। শুধু মংগল নয়, মংগলসহ বাকি যেসব গ্রহ নিয়ে বিজ্ঞানীরা উঠেপড়ে গবেষনা করছে সেগুলো নিয়েও যেন ব্যাসিক ধারনা ক্লিয়ার করে দেওয়া উচিত।যুক্তি দিলে অনেক যুক্তি দেওয়া যাবে কিন্তু যা হচ্ছে ও ভবিষ্যতে হবে তা নিয়ে মানুষকে ডিমটিবেটেড করা মোটেও শুভনীয় কাজ নয়।
মোরা অাশাবাদী হয়ে রইলাম ট্যাকিয়ন অামাদের ভালো কিছু উপহার দিবে ও উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ নামক দেশকে টপ সারিতে রাখতে অবদান রাখবে।
ধন্যবাদ। ট্যকিয়ন কখনোই জানতে নিষেধ করেনি ও সবসময় সকল বিষয়ে জানতে আগ্রহ দিয়েছে। তবে আমরা বলেছি, যেই কাজ আগে করা দরকার, তা আগে করতে হবে। আগের কাজ পরে করলে তার দায়ভারও আমাদেরই গুনতে হবে।