নিউটনের গতির তিনটি সূত্র পড়েছেন অবশ্যই। প্রথম সূত্র আমাদের বলে “বাহ্যিক কোন বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকে আর গতিশীল বস্তু চিরকাল গতিশীল থাকবে।” এ আমাদের প্রায় সবারই জানা। কিন্তু জানেন কি “সূত্র”-র সংঙ্গায় বলা হয় সূত্র নির্দিষ্ট একটি শর্তের উপর দাড়িয়ে থাকে। যেমন বয়েলের সূত্র তখনই খাটে যখন গ্যাসের ভর আর তাপমাত্রা ধূবক থাকবে। নিউটনের সূত্রও একটি শর্তের উপর ভিত্তি করে আছে। তা হলো,
নিউটনের সূত্রগুলো শুধু ওই সকল পর্যবেক্ষকই প্রমাণ করতে পারবে যারা জড় কাঠামোতে (Inertial frame of reference) আছে। জড় কাঠামো হল সেই কাঠামো যা স্থির অথবা সমবেগ প্রাপ্ত অবস্থায় আছে। যারা স্থির অথবা সমবেগে না থেকে ত্বরাণিত অবস্থায় (Non- inertial frame of reference) আছে তারা হাজার চেষ্টা করেও নিউটনের গতি সূত্রগুলোকে প্রমাণ করতে পারবে না। চলুন উদাহরন দেই একটা,
আপনি একটি স্থির বাসে বসে আছেন। হঠাৎ করে বাসটি চলতে শুরু করলো। আপনি খেয়াল করবেন আপনি পেছনের দিকে হেলে পড়েছেন। এখন আপনি অবশ্যই বলবেন “জড়তা”-র কারণে এমন হয়েছে। আমি না বলবো না। আপনার কথা সঠিকই। কিন্তু সমস্যাটা তখনি ঘটবে যখন আপনার কাছে প্রশ্ন করা হবে “নিউটনের ২য় সূত্র” দিয়ে ঘটনাটি ব্যাখ্যা করুন। তখন আপনি আপনার পেছনমুখী ত্বরণের জন্য প্রয়োজনীয় বল খুঁজে পাবেন না। আর দ্বিতীয় সূত্র বলে, বল ছাড়া ভরের ত্বরণ অসম্ভব। ভেঙ্গে গেল নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র। আর যদি সূত্রটির বৈধতা রক্ষা করতে চান তো আপনাকে একটি নতুন বলের অবতারণা করতে হবে যাকে ছদ্ম বল (Pseudo Force) বলা যেতে পারে।
এর সাথে কেন্দ্রবহীর্মুখী বলের কী সম্পর্ক?
মূলত কেন্দ্রবহির্মুখী বলের কথা আসে ঘূর্ণয়মান সিস্টেমের ক্ষেত্রে। আর আমরা জানি প্রত্যেক ঘূর্ণন যুক্ত বস্তুর সাথে ত্বরণ জড়িত। মানে তা অজড় কাঠামোর আওতায় পড়ে। এই ক্ষেত্রে নিউটনের গতি সূত্র খাটবে না। বস্তুর সাধারণ প্রবনতা বস্তু সরল পথে চলতে চায়। অন্য কোনো বস্তুকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণনশীল বস্তুটি ঠিকই চাচ্ছে সরল পথে চলতে। এরই ফলাফল হিসেবে কেন্দ্রবহীর্মুখী বলের চিন্তা আসে আমাদের মাথায়। মনে হয় বস্তুটি যেন কেন্দ্রমুখী বলের বিপরীতে কাজ করছে। যদি তাই হতো ঘূর্ণনশীল বস্তুটি কেন্দ্রমুখী বল থেকে মুক্ত হওয়ার পর ওই বৃত্তাকার পথে বস্তুর উপর অংকিত স্পর্শক বরাবর চলে যেত না বরং কেন্দ্রমুখীবলের দিকের সাথে 180 ডিগ্রি কোণে বিপরীত দিকে চলে যেত। কিন্তু তা কখনোই হয় না।
কেন্দ্রবহীর্মুখী বলের ধারনাটি আমাদের মস্তিষ্কের তৈরি। আমাদের মনে হয় যেন কোন বল কাজ করছে বাস্তবে তা নয়। এটি একটি ভুতুড়ে বল যা অশরীরী, ভৌতজগতে যার কোন অস্তিত্ব নেই।