1929 সালে এডউইন হাবলের পর্যবেক্ষণ থেকে আমাদের মহাবিশ্বের প্রসারন সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়। গ্যালাক্সিগুলো পর্যবেক্ষণের সময় দেখা যায়, যে গ্যালাক্সি আমাদের থেকে যত দূরে থাকে তারা আমাদের থেকে তত বেশি বেগে দূরে সরে যাচ্ছে। এছাড়া গ্যালাক্সিগুলো হতে আগত আলোর বর্ণালীরেখা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে বর্ণালীর লোহিত সরণ হচ্ছে। অর্থাৎ বর্ণালী রেখা লাল আলোর দিকে সরে যাচ্ছে। লাল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি। অর্থাৎ গ্যালাক্সিগুলো হতে আগত আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে। এদিকে শব্দ তরঙ্গের ক্ষেত্রে ডপলার ক্রিয়ার মাধ্যমে জানা যায়, শ্রোতার দিকে আগত কোন শব্দ উৎসের কম্পাঙ্ক শ্রোতার কাছে বেশি মনে হবে। অর্থাৎ শ্রোতার কাছে মনে হবে শব্দের তরঙ্গদৈর্ঘ্য কমে যাচ্ছে। আবার শব্দ উৎস যখন শ্রোতার কাছ থেকে দূরে চলে যেতে থাকবে তখন শ্রোতার কাছে মনে হবে শব্দের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেড়ে যাচ্ছে।
শব্দ যেমন এক প্রকার তরঙ্গ। আলোও এক প্রকার তরঙ্গ। তাই আলোর ক্ষেত্রেও ডপলার ক্রিয়া প্রযোজ্য হবে। এ কারণে কোন আলোক উৎস যখন আমাদের নিকটে আসতে থাকবে তখন আমাদের মনে হবে আলোক তরঙ্গদৈর্ঘ্য কমে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বর্ণালী রেখা নীল আলোর দিকে সরে যাবে। আবার যখন আলোক উৎস আমাদের থেকে দূরে যাওয়া শুরু করবে তখন আলোক তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেড়ে যাবে। অর্থাৎ বর্ণালী রেখা লাল আলোর দিকে সরে যাবে। এ বিষয়টির নাম রেডশিফট (লোহিতসরণ)। যেহেতু হাবলের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে গ্যালাক্সিগুলো হতে আগত আলোর লোহিত সরণ হচ্ছে, তাই স্পষ্টতই গ্যালাক্সিগুলো আমাদের থেকে দূরে চলে যাচ্ছে।
বিজ্ঞানী জর্জ লেমিত্রি এই পর্যবেক্ষণ থেকে বললেন, যদি এভাবে গ্যালাক্সিগুলো দূরে সরে যেতে থাকে, তাহলে এমন হতে পারে যে দূর অতীতে এরা সব একজায়গায় আরো কাছাকাছি অবস্থায় ছিলো! হয়ত একটি বিন্দুতে মিশে ছিলো যেখান থেকে প্রচন্ড বিস্ফোরণের মাধ্যমে তৈরি হলো এই মহাবিশ্ব প্রসারনের খেলা! মহাবিস্ফোরনের মাধ্যমে সৃষ্ট এই মডলেই আমাদের কাছে বিগ ব্যাং মডেল নামে পরিচিত। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে বিগ ব্যাং-এর স্বপক্ষে অনেক প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছিলো। বিগ ব্যাং তত্ত্বের মাধ্যমে ধারণা করা হয়েছিলো যে প্রাথমিকভাবে মহাবিশ্ব ছিলো খুব উত্তপ্ত এবং সময়ের প্রসারনের মাধ্যমে মহাবিশ্ব শীতল হতে হতে বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। প্রাথমিক সেই উত্তপ্ত মহাবিশ্বের বিকিরণ ছড়িয়ে পড়েছিলো যার রেশ এখনো কাটে নি।একে বলা হয় কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড/অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরন বা সংক্ষেপে CMB। উইলসন ও পেনজিয়াস ১৯৭৮ সালে CMB-এর উপস্থিতি শনাক্ত করার জন্য নোবেল পুরষ্কার পান।
এছাড়া প্রাথমিক মহাবিশ্বে (মহাবিশ্বের জন্মের থেকে প্রথম তিন মিনিটের মাঝে) মূল কণাগুলো থেকে হালকা মৌল সংশ্লেষের প্রক্রিয়াটাকে বলা হয় বিগব্যাং নিউক্লিওসিন্থেসিস (BBN)। প্রক্রিয়াটাকে ভারী মৌলের আদিমতম সংশ্লেষণ বলা যেতে পারে। বিগ ব্যাং থিওরির মাধ্যমে CMB এবং BBN-এর বিভিন্ন ব্যাখা বেশ ভালোভাবে দেওয়া গেলেও কয়েকটি ছোটখাট কিন্তু অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যাখা বিগ ব্যাং তত্ত্বের মাধ্যমে দেওয়া যাচ্ছিল না। সমস্যাগুলো ছিলো এমন :
সমতল মহাবিশ্বের সমস্যা :
মহাবিশ্বের ঘনত্ব সম্পর্কিত হিসাব নিকাশ করে পাওয়া যায় যে এখন পর্যন্ত আমাদের মহাবিশ্ব প্রায় সমতল এবং যত দূর অতীতে যাওয়া হবে ততই মহাবিশ্ব সমতল হওয়ার প্রবনতা বাড়ে।দেখা গেছে মহাবিশ্বের শক্তির গড় ঘনত্ব সংকট ঘনত্বের থেকে সামান্য বেশি। অর্থাৎ এদের অনুপাতের মান প্রায় 1 এর কাছাকাছি। মান যখন 1 হয় তখন সেটা সমতল আকার বোঝায়। এক্ষেত্রে ঐ তলে একটি ত্রিভুজ আঁকা হলে তিনটি কোণের যোগফল 180 ডিগ্রি হয় । অনুপাতের মান যদি 1 থেকে বেশি হয় তাহলে বোঝা যাবে শক্তির গড় ঘনত্ব সংকট ঘনত্বের চেয়ে বেশি। এ অবস্থায় আকার হবে গোলক আকারের মহাবিশ্ব। এক্ষেত্রে ত্রিভূজের তিন কোণের সমষ্টি 180 ডিগ্রি থেকে বেশি হয়। যদি অনুপাতটি এক থেকে কম হয় তাহলে সেটা ঘোড়ার জিনের মতো আকৃতি নির্দেশ করে। এক্ষেত্রে ত্রিভূজের কোণগুলোর সমষ্টি 180 ডিগ্রি থেকে কম হয়। হিসাব করে এই অনুপাতটির মান প্রায় 1 পাওয়া গেছে। তাহলে বলতে পারি আমাদের মহাবিশ্ব প্রায় সমতল। কিন্তু এ ব্যাপারটি তো বিগ ব্যাং থিওরির সাথে সাংঘর্ষিক। বিগ ব্যাং হলে আমাদের মহাবিশ্ব গোলকাকার বা প্রায় গোলকাকার হওয়ার কথা ছিলো। তাহলে উপায়?
এক মেরুর সমস্যা :
একটি দন্ড চৌম্বকে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু থাকে৷ এই চুম্বকটিকে অর্ধেক করলেও দুইটি মেরু পাওয়া যায়। আমরা সকলেই হয়ত জেনে এসেছি উত্তর মেরু থাকলে একই সাথে দক্ষিণ মেরুও থাকবে। কিন্তু শুধুমাত্র একটি মেরু পাওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলো বিগ ব্যাং তত্ত্ব। প্রচুর সংখ্যক স্থায়ী ম্যাগনেটিক মনোপোলের (চৌম্বকীয় এক মেরু) অস্তিত্ব ছিলো প্রাথমিক সেই সময়টিতে। কিন্তু সমস্যা হলো মনোপোলগুলো এখন আর খুঁজে পাওয়া যায় না কেন? যদি বহুসংখ্যক স্থায়ী মনোপোল তখন থাকতো তাহলে তো আমরা এখন তা খুঁজে পাবো। কিন্তু কোথায় সেগুলো?
CMB এর তাপমাত্রা সমস্যা/দিগন্ত সমস্যা :
উইলসন এবং পেনজিয়াসের CMB শনাক্ত করার মাধ্যমে আমাদের মহাবিশ্বের একটি বর্ণিল মডেল সামনে চলে আসে। এ মডেল অনুসারে বেশি তাপমাত্রার অঞ্চল এবং কম তাপমাত্রার অঞ্চলের তাপমাত্রা নির্ণয় করা যায়। কিন্তু মূল সমস্যাটা হলো বেশি তাপমাত্রার অঞ্চল এবং কম তাপমাত্রার অঞ্চলের তাপমাত্রার পার্থক্য নেই বললেই চলে। প্রায় একই তাপমাত্রা সবজায়গায়। কিন্তু বিগ ব্যাং তত্ত্ব যদি মেনে নেওয়া হয়, তাহলে তো এটা সম্ভব না। হিসাব করে পাওয়া যায় বিগ ব্যাং-এর সূচনা আজ থেকে প্রায় 13.8 বিলিয়ন বছর আগে। তাহলে যদি একদিকে যে তাপমাত্রা পাওয়া যাবে, তার ঠিক বিপরীত দিকে তো সেই একই তাপমাত্রা পাওয়ার কথা না। কারণ এই দুই বিপরীত স্থানের একটি হতে অপরটিতে আলো যেতেই যে সময় লাগবে তা 13.8 বিলিয়ন থেকে বেশি।নিচের চিত্রটিতে A ও B বিন্দু দুইটির মধ্যবর্তী দূরত্ব 27.6 বিলিয়ন আলোকবর্ষ হওয়া সত্ত্বেও এদের তাপমাত্রা প্রায় একই! অর্থাৎ সহজ ভাষায় মূল সমস্যাটি হলো দুইটি স্থানের মাঝে কোন সংযোগ না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে এদের তাপমাত্রা সাম্যবস্থায় পৌঁছালো?
এই সমস্যাগুলোর যথাযথ উত্তর প্রদানের লক্ষ্যে 1980 সালে অ্যালান গুথ (Alan Guth) ইনফ্লেশন তত্ত্ব প্রদান করেন। এই তত্ত্ব অনুসারে অতি ক্ষুদ্র আকারের মহাবিশ্ব অতিদ্রুত একটি প্রসারনের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলো। এই প্রসারন এতই দ্রুত হয়েছিলো যে সেকেন্ডের অতি ক্ষুদ্র ব্যবধানে আমাদের মহাবিশ্ব 10^{26} গুন প্রসারিত হয়ে গিয়েছিলো। এই বৃহৎ পরিসরের প্রসারনকে ইনফ্লেশন বলা হয়। এখন মূল প্রশ্ন হলো ইনফ্লেশন তত্ত্ব কীভাবে বিগ-ব্যাং মডেলের সমস্যাগুলো সমাধান করে?
সমতল মহাবিশ্বের সমস্যার সমাধান :
নিচের চিত্রটিতে বেলুনটির উপর একটি পিপড়া অবস্থান করছে। যেহেতু বেলুনটা প্রাথমিক অবস্থায় কম বাতাসপূর্ণ অবস্থায় আছে তাই এমতাবস্থায় পিপড়াটি সহজেই বেলুনের পৃষ্ঠতলের বক্রতা অনুধাবন করতে পারবে। কিন্তু বেলুনটি যদি বেশি পরিমান প্রসারিত হয়ে যায়, তাহলে পিপড়াটির কাছে মনে হবে সে আদতে প্রায় সমতল একটি পৃষ্ঠতলে অবস্থান করছে। ঠিক যেমন আমাদের পৃথিবী উপগোলক হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই সমতল পৃথিবীতে বিশ্বাসী। ঠিক এমনটিই হয়েছিলো ইনফ্লেশনের মাধ্যমে। মুহূর্তের মাঝে বিপুল প্রসারণ হওয়ায় প্রাথমিক অবস্থার অতি ক্ষুদ্র মহাবিশ্বে বক্রতা থাকলেও ইনফ্লেশনের মাধ্যমে সে বক্র তল প্রায় সমতলে পরিণত হয়েছে। আর আমরা তো পর্যবেক্ষণ করি এই বিশালতার সামান্য একটি অংশ নিয়ে। তাই আমাদের দৃষ্টিতে সমতল ছাড়া কিছুই মনে হয়না। একারণেই আমাদের পর্যবেক্ষণে মহাবিশ্ব প্রায় সমতল মনে হয়।
এক মেরুর সমস্যার সমাধান :
ইনফ্লেশন হওয়ার ফলে যেসব একক মেরুর (মনোপোল) অস্তিত্ব প্রাথমিক অবস্থায় ছিলো সেগুলোর ঘনত্ব হুট করে হ্রাস পায়। এতটাই হ্রাস পায় যে মনোপোলের শনাক্তকরণ করা খুবই দূরূহ হয়ে গিয়েছে। এ কারণে মনোপোলের সন্ধান আমরা পাই না।
দিগন্ত সমস্যার সমাধান :
ইনফ্লেশন প্রক্রিয়ায় মহাবিশ্ব প্রসারণ মূলত সূচকীয় হারে মূহুর্তের মাঝেই বেড়ে গিয়েছিলো। যে কারণে যে দুইটি অঞ্চল এখন বহু বহু দূরে অবস্থান করছে তারা ইনফ্লেশন এর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে বলতে গেলে প্রায় একই জায়গায়, একটি সাধারণ অবস্থা অতিক্রম করছিলো। অন্য কথায় ইনফ্লেশনের ঠিক পূর্বমুহূর্তে তাদের একে অপরের সংস্পর্শে আসার প্রবনতা বেশি ছিলো। অর্থাৎ তাদের মাঝে একটি আপাত সংযোগ ছিলো। আর CMB এর তাপমাত্রা সমস্যার সমাধান এখানেই লুকিয়ে আছে। ঐ সংযোগ থাকার ফলে তাদের তাপমাত্রা পুরোপুরি এক না হলেও প্রায় একই ছিলো। হয়ত সামান্য পার্থক্য ছিলো। কিন্তু যখনই ইনফ্লেশন হলো তখনই এই অঞ্চলগুলো আলাদা হয়ে গেলো প্রচন্ড গতিতে। তাপমাত্রাও ধীরে ধীরে কমে যেতে লাগলো। কিন্তু পূর্বমুহূর্তে তারা প্রায় তাপীয় সাম্যবস্থায় থাকার কারণে আজও তাদের সেই তাপমাত্রার হেরফের খুব একটা লক্ষ্য করা যায় না। মহাবিশ্বে যেদিকেই তাকানো হোক না কেন এই তাপমাত্রা প্রায় একই। এ তাপমাত্রা বর্তমানে প্রায় পরম শূন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি। CMB পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে দেখা যায় এই বিকিরণের গড় তাপমাত্রা 2.725 কেলভিনের খুব কাছাকাছি। পরম শূন্য তাপমাত্রা বলতে 0 কেলভিন বোঝায়। (-273.15 ডিগ্রি সেলসিয়াস) 0 কেলভিনের নিচে আর কোন তাপমাত্রার অস্তিত্ব নেই।
ইনফ্লেশন তত্ত্ব এই সব প্রশ্নের উত্তর যেমন দিয়েছিলো তেমনই একটি সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছিলো। সেটা হলো অসংখ্য মহাবিশ্বের সম্ভাবনা৷
শুধু আমাদের ইউনিভার্সই নয়, রয়েছে অসংখ্য ইউনিভার্স। এদিকে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ শন ক্যারল দেখান যে একদম শূন্য থেকে অসংখ্য মহাবিশ্বের উৎপত্তি হওয়া অসম্ভব কিছু না। আমরা যে শূন্যস্থান দেখি সেটা প্রকৃতপক্ষে শূন্য নয়। শূন্যতার মাঝে অনবরত চলছে কণা-প্রতিকণা সৃষ্টি ও ধ্বংস। শূন্যস্থানের এই কোয়ান্টাম আলোড়নের ফলেই সৃষ্টি হতে পারে বিভিন্ন ধরনের বাবল/বুদবুদ। এই বুদবুদ আসলে স্থান কালের বুদবুদ। আমাদের মহাবিশ্ব যেমন একটি বুদবুদ থেকে সৃষ্ট তেমনি অন্যান্য বুদবুদ সৃষ্টি হওয়া তো অসম্ভব নয়। যদি এমন হয় তাহলে তো সেগুলো প্রসারনের মাধ্যমেও অসংখ্য মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতে পারে! অ্যালান গুথও তার তত্ত্ব থেকে বলেছিলেন মাল্টিভার্স থাকার সম্ভাবনার কথা।
ইনফ্লেশন হওয়ার কারণ এখন পর্যন্ত কিন্তু ঠিকভাবে জানা যায়নি। সবই অনুমান নির্ভর ধারণা মাত্র। তবে সবচেয়ে যুক্তিপূর্ণ যে অনুমানটি এখন পর্যন্ত করা হয়েছে তার মধ্যে আছে সবল নিউক্লীয় বলভিত্তিক অনুমান। ইনফ্লেশনের ঐ পর্যায়ে হয়ত সবল নিউক্লীয় বল অন্যান্য মৌলিক বল থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিলো। (এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হওয়া মৌলিক বল চারটি: সবল নিউক্লীয় বল, দূর্বল নিউক্লীয় বল, মহাকর্ষ বল, তাড়িৎচৌম্বক বল)। আলাদা হওয়ার ফলে সেসময়ের মহাবিশ্ব একটি অস্থায়ী অবস্থায় পতিত হয়েছিলো। এই অস্থায়ী অবস্থা থেকে স্থায়ী অবস্থায় যাওয়ার জন্য তৈরি হয় তীব্র মহাকর্ষবিরোধী প্রভাব। যার ফলে মুহূর্তের মধ্যেই প্রচুর পরিমাণে কণা তৈরি হয়ে এই ইনফ্লেশনকে ঘটিয়েছে। এছাড়া এসময় কোয়ান্টাম আলোড়নের মাধ্যমে মাল্টিভার্সের সম্ভাবনাও আছে। এই অনুমান অনুসারে বর্তমানে গ্যালাক্সি ক্লাস্টারগুলোর একদম আদিমতম অবস্থা সম্পর্কে একটা ধারণা করা যায়। তবে বিজ্ঞান তো আর অনুমান করেই বসে থাকতে পারে না। সে চায় প্রমাণ। ইনফ্লেশন আসলেই হয়েছিলো কিনা সেই প্রমাণ খোঁজার জন্য 1992 সালে কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড এক্সপ্লোরার (COBE) কাজ শুরু করে। CMB এর বিকিরণ পরীক্ষা করে প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ইনফ্লেশনের সুস্পষ্ট প্রমান। এছাড়া 2003 সালে WMAP (Wilkinson Microwave Anisotropy probe) এর বিশ্লেষণ, 2014 সালে CMB এবং মহাকর্ষীয় তরঙ্গের সম্মিলিত প্রভাব শনাক্তকরণ– এসব থেকে ইনফ্লেশনের পক্ষে একটি জোরালো প্রমাণ উপস্থাপিত হয়। শুধু ইনফ্লেশনই না। গুথ যেমন বলেছিলেন, তেমনভাবেই বিষয়গুলো প্রায় ত্রুটিহীনভাবে মিলে যেতে থাকে।
তবে এত সাফল্য থাকা সত্ত্বেও ইনফ্লেশনের কিছু ব্যর্থতা আছে। গুথ নিজেই তা স্বীকার করেছেন। ইনফ্লেশন হলেও পরবর্তীতে কীভাবে ছায়াপথগুলো সৃষ্টি হলো কিংবা কীভাবেই বা আসলো তারকারাজি তা ইনফ্লেশন ব্যাখ্যা করতে পারে না। গুথের মডেলকে পুরাতন হিসেবে আখ্যা দিয়ে পরবর্তীতে 1982 সালে অ্যান্দ্রেই দিমিত্রিয়েভিচ লিন্দে নতুন একটি ইনফ্লেশন মডেলের অবতারণা করেন। এমডেলটি গাথ এর মডেলের সাথে অনেকাংশেই সমর্থনযোগ্য ছিলো। এই নতুন মডেলে অসংখ্য মহাবিশ্বের ধারণা আরও পাকাপোক্ত অবস্থানে চলে আসে। 1983 সালে ইনফ্লেশনের শেষ পর্যায়ে কীভাবে ছায়াপথগুলোর জন্ম হয়েছিলো তার ব্যাখ্যা করেছিলেন জেমস বার্ডিন, মিখায়েল এস টার্নার এবং স্টেইনহার্ড।
এভাবে পরবর্তীতে ইনফ্লেশনের আরও কিছু জটিল সমালোচনা সামনে চলে আসে। তবে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণকৃত ডাটার সাথে অনুমান নির্ভর কথাগুলো মিলে যাওয়ার কারণে ইনফ্লেশনের ধারণাকে সরাসরি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আবার একদম নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করারও সুযোগ নেই। কিন্তু আমরা আমাদের মহাবিশ্বের সৌন্দর্য বোঝার জন্য এসব তো জানতেই পারি। চোখ থাকুক ভবিষ্যতের দিকে।
2 comments on “বিগ ব্যাং তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা দূরীকরণ”
দারুণ হয়েছে লেখাটি। পড়ে ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ