গত বছর জানুয়ারিতে জ্যোতির্বিদরা স্পষ্টভাবে একটি ব্ল্যাকহোল এবং একটি নিউট্রন স্টারের সংঘর্ষ পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন। এই ঘটনার ১০ দিন পর আরেকটি দূরবর্তী স্থানে তারা ওই একই ঘটনা পূনরায় প্রত্যক্ষ করেন। উল্লেখ্য, একটি নক্ষত্রের ভর যদি অত্যন্ত বেশি হয় তবে তা নিজ মহাকর্ষের ফলেই সংকুচিত হয়ে যায় ও এর বস্তু আকর্ষণ করার ক্ষমতা খুবই বেড়ে যায়। এতোটুকু বেড়ে যায় যে, এর আকর্ষণ থেকে আলোও বের হতে পারে না। এধরণের বস্তুকে ব্ল্যাকহোল বলে। অন্যদিকে যদি যথেষ্ট পরিমাণে ভর না থাকে তবে তা ব্ল্যাকহোলে পরিণত হতে পারে না, তবে তা নিউট্রন স্টারে পরিণত হয়।
জ্যোতির্বিদ্যায় এরূপ সফলতার বিষয়টি মাত্র কিছুদিন আগে অ্যাস্ট্রোফিজিকাল জার্নাল লেটার্সে প্রকাশিত হয়।এই শাখাটি জ্যোতির্বিদ্যার সাম্প্রতিক গড়ে ওঠা শাখাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নতুন যার কাজ মহাজাগতিক বিপর্যয় গুলো পর্যবেক্ষণ করা যেগুলো মহাবিশ্বের সংকোচন এবং প্রসারণে প্রভাব ফেলছে।
উইসকন্সিন-মিলওয়াকি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং LIGO Scientific Collaboration এর মুখপাত্র বলেন,
এটাই সর্বপ্রথম যে আমরা, একটি ব্ল্যাকহোল এবং একটি নিউট্রন স্টারের সংঘর্ষ শনক্ত করতে পেরেছি।
প্যাট্রিক ব্রাডি
জ্যোতির্বিদদের ধারণা ছিলো ব্ল্যাকহোল এবং নিউট্রন স্টারের সংঘর্ষের ঘটনা প্রকৃতিতে বিদ্যমান তবে তাদের কাছে উপযুক্ত প্রমাণ ছিলো না এটা নিশ্চিত করার জন্য। এই ঘটনাটি মহাবিশ্বের বাইনারি স্টার সিস্টেমের ধারণাটিকে সুদৃঢ় করেছে। পাশাপাশি আমাদের মিল্কিওয়েতে কেনো এখনো পর্যন্ত এমন ঘটনা প্রত্যক্ষ করা যায় নি সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বাইনারি স্টার সিস্টেম হলো, যখন একটি সিস্টেমের কেন্দ্রে একটি নক্ষত্র না থেকে দুইটি নক্ষত্র অবস্থান করে, তখন যে সিস্টেম গঠিত হয় তা।
গত ২০ বছর ধরে LIGO (Laser Interferometer Gravitational-wave Observatory) এ ধরনের ঘটনা শনাক্ত করার চেষ্টা করছে। কেননা এর সাহায্যে আইন্সটাইনের সাধারন আপেক্ষিকতার তত্ত্বের পক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়। কয়েক বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করেও লাইগোর দুটি পর্যবেক্ষণকেন্দ্র, হ্যান্ডফোর্ড এবং লিভিংস্টোনের লেজার বিমগুলো কোনো কিছুই শনাক্ত করতে পারেনি।
দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে লাইগোর দুটো পর্যবেক্ষণকেন্দ্রই গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। সেই তরঙ্গ সংকেতটি দুটি ব্ল্যাকহোলের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে সৃষ্টি হয়েছিলো। যেগুলো একে অপরকে প্রদক্ষিণ করতে করতে একসময় একিসাথে মিশে গিয়ে একটি ব্ল্যাকহোলে পরিণত হয়েছিলো।
এর ২ বছর পর ২০১৭ সালে, লাইগো দুটি নিউট্রন নক্ষত্রের মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়টি শনাক্ত করে। সংঘর্ষের পর অবশিষ্টাংশটির ঘনত্ব ছিলো সূর্যের চেয়েও বেশি তবে ব্ল্যাকহোলে পরিণত হওয়ার মতো যথেষ্ট বড় ছিলো না। মহাবিশ্বে সোনা এবং রুপার বেশিরভাগ অংশ সৃষ্টি হয় এরুপ সংঘর্ষেগুলোর মাধ্যমেই। ইতালিতে অবস্থিত VIRGO (লাইগোর চেয়ে ছোটো একটি ইউরোপিয়ান পর্যবেক্ষণকেন্দ্র) এর সাহায্য নিয়ে জ্যোতির্বিদরা সংঘর্ষের স্থানটি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
জ্যোতির্বিদরা দীর্ঘদিন ধরে একটি ব্ল্যাকহোল এবং একটি নিউট্রন স্টারের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা প্রত্যাশা করছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পরেও তারা এমনটি কেনো দেখতে পাননি তা একটি বড় রহস্য।
২০১৯ সালে শেষ অবদি তারা দুটি সন্দেহজনক তরঙ্গ শনাক্ত করেন। যার প্রথমটি শণাক্ত করা হয় এপ্রিল,২০১৯ এ। এটি তাদের তদন্তের আওতায় ছিলো না এবং এ সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করেন জ্যোতির্বিদগণ। যথেষ্ট প্রমাণ না থাকায় এটিকে গ্রাভিটেশনাল ওয়েভ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।
দ্বিতীয় শণাক্তকরণ হয় আগস্ট ২০১৯ এ। এখানে সংঘর্ষকারীদের মধ্যে বড়টি অবশ্যই ব্ল্যাকহোল তবে ছোটটি নিউট্রন স্টার না কি ব্ল্যাকহোল তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। এটি ছিলো প্রায় ২.৬ সৌরভরের যা এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা সকল ব্ল্যাকহোলের চেয়ে ছোটো এবং সকল নিউট্রন স্টার থেকে বড়ো। তাই এটিকেও ব্ল্যাকহোল-নিউট্রন স্টার জুটি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায়নি।
নতুন পর্যবেক্ষণ গুলো শেষ পর্যন্ত প্রমাণ করে যে, নিউট্রন স্টার এবং ব্ল্যাকহোলের জুটি সত্যিই রয়েছে যদিও তা মিল্কিওয়ে থেকে অনেক দূরে। ব্ল্যাকহোল এবং নিউট্রন স্টারের সংঘর্ষের বিষয়টি সর্বপ্রথম শনাক্ত করা হয় ৫ জানুয়ারি, ২০২০ এ লিভিংস্টোনে। সে সময় হ্যান্ডফোর্ডের ব্যবস্থাপনাটি অস্থায়ীভাবে বন্ধ ছিলো। এই সংঘর্ষের ব্ল্যাকহোলটি ছিলো প্রায় ৯ সৌরভরের এবং নিউট্রন স্টারটি ছিলো প্রায় ২ সৌরভরের। এই ঘটনাটি ঘটে পৃথিবী থেকে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে।
এর মাত্র ১০ দিন পর ১৫ জানুয়ারি, ২০২০ এ হ্যান্ডফোর্ডের ব্যবস্থাপনাটি সচল করা হয় এবং একইসাথে তিনটি যন্ত্রই ব্ল্যাকহোল এবং নিউট্রন-স্টারের দ্বিতীয় সংঘর্ষটি নিশ্চিত করে। এবারের বস্তু দুটি ছিলো কিছুটা হালকা। নিউট্রন স্টারটি ছিলো প্রায় ১.৫ সৌরভরের এবং ব্ল্যাকহোলটি ছিলো প্রায় ৬ সৌরভরের।
এই সংঘর্ষ দুটি শণাক্ত হওয়ার পর ড. ব্রাডি বলেছেন,
উপস্থিত সকল প্রশ্নগুলোর মধ্যে একটি হলো, কেন এখনো পর্যন্ত মিল্কিওয়েতে একটিও ব্ল্যাকহোল-নিউট্রন স্টার জুটি খুঁজে পাওয়া যায়নি? হতে পারে এটি অনুসন্ধানের ত্রুটি কিংবা এগুলো দ্রুতই মিশে গেছে এবং আমাদের গ্যালাক্সিতে আর অবশিষ্ট নেই। এটি এখন সত্যিই একটি উন্মুক্ত প্রশ্ন।
ড. ব্রাডি
তথ্যসূত্র : https://iopscience.iop.org/article/10.3847/2041-8213/ac082e
8 comments on “নিউট্রন তারাকে গিলে খেলো ব্ল্যাকহোল”
দারুণ লিখা!
চমৎকার
u have a Bright future.. Keep posting we will Support u
Informative… It was really helpful.. Keep posting like this.. U have a bright future.. 🖤
You have a very good writing skill sister. Keep it up in future also. Best wishes for you.
Eta ar kothao dekhi nai..unique chilo.
Thanks
Onk sundor hoice❤️