Skip to content

Tachyon

বাংলায় বিজ্ঞান গবেষণায় প্রথম উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম

আপেক্ষিক ভর বলতে কিছুই নেই!

লেখক : কে. এম. শরীয়াত উল্লাহ

আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বের একটি আলোচনা আসে, ভরের আপেক্ষিকতা নিয়ে। এখানে বলা হয়, বস্তু আলোর বেগের যত কাছাকাছি চলাচল করবে, তার ভর তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। এমনকি আলোর বেগে চলাচল করে এমন বস্তুর ভর অসীম। অন্তত এমনটাই বলে থাকেন, বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণে কাজ করা বিজ্ঞানীগণ। এমনকি বাংলাদেশের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকেও ভরের আপেক্ষিকতা বলে একটি পাঠ পড়ানো হয়। যদিও অ্যাকাডেমিক ফিল্ডের দিক দিয়ে দেখতে গেলে আপেক্ষিক ভর বলতে আসলে কোনো টার্ম নেই। তাহলে কেন আপেক্ষিক ভরের আবির্ভাব হলো? চলুন দেখে আসা যাক।

অ্যাকাডেমিকভাবে আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব থেকে তিনটি খুব সুন্দর আইডিয়া বেরিয়ে আসে। এরা হলো – সময়ের আপেক্ষিকতা, দৈর্ঘ্যের আপেক্ষিকতা ও ভরবেগের আপেক্ষিকতা (এই আইডিয়াটাকেই ভুলভাবে শুধু ভরের আপেক্ষিকতা হিসেবে দেখানো হয়)।

ভরের আপেক্ষিকতা বুঝানোর জন্য যে সমীকরণ দেখানো হয় তা হচ্ছে,

m = \frac{m_0}{\sqrt{1-\frac{v^2}{c^2}}}

এই সমীকরণে একটা বিষয় খেয়াল করুন, বস্তুর বেগ আলোর বেগের যত কাছাকাছি হয়, ভগ্নাংশের নিচের মানটি ততো ছোট হতে থাকে। এখন নিচের এ মানটিকে আলাদাভাবে একটি নাম দেওয়া যাক, ইনভার্স লরেঞ্জ ফ্যাক্টর। একে গ্রিক অক্ষর গামা দিয়ে চিহ্নিত করলাম।

\gamma = \sqrt{1-\frac{v^2}{c^2}}

এবার লক্ষ্য করুন, এই গামার মান সবসময় ০ থেকে ১ এর মধ্যে হবে। আমাদের পরিচিত জগতে এক এর বাইরে এর মান হবে না। এখন কোনো একটি ভগ্নাংশকে আপনি যদি ০ থেকে বড়ো কিন্তু ১ থেকে ছোটো ভগ্নাংশ দিয়ে ভাগ করেন, তখন কিন্তু ভাগফল ছোটো হওয়ার বদলে, বড়ো হয়ে যায়। যেমন –

\frac{25}{0.1}=250 \\[0.5em] \frac{25}{0.2} = 125

এখানেও তেমনটাই ঘটে। গামার মান ০ থেকে ১ এর মধ্যে হওয়ায় m এর মান m_0 থেকে বেশি হয়ে যায়, মানে ভর বৃদ্ধি পায়। বস্তুর বেগ (v) যদি আলোর বেগের সমান হয়ে যায়, তাহলে m_0 এর নিচে একটি শুন্য চলে আসে। ফলে m এর মান অসীম হয়ে যায়। সহজেই বুঝে গেলে? কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ভর বৃদ্ধি পাওয়ার এ ঘটনাটি সব সময় সত্য হয় না। তাই বিজ্ঞানীরা যখন আপেক্ষিকতার আইডিয়াগুলো প্রুফ করেন, তখন ভরবেগের আপেক্ষিকতা নামে একটি টার্ম নিয়ে কাজ করেন। তো এবার বুঝানো যাক ভরবেগই বা কি আর ভরবেগের আপেক্ষিকতাই বা কী?

ভরবেগ হচ্ছে একটি বস্তুকে থামাতে আপনার কতটুকু কষ্ট হচ্ছে তার নির্ণায়ক। যে বস্তুর ভরবেগ যত বেশি, তাকে থামাতে কষ্টও ততো বেশি। যে বস্তুর ভরবেগ যত কম, তাকে থামাতে কষ্টও ততো কম। যেমন একটি ধীরগতির কিন্তু বিশাল ভরের ট্রেন থামানো আপনার জন্য বেশ মুশকিল। আবার দ্রুতগতির কিন্তু ক্ষুদ্র ভরের একটি বুলেট থামানোও আপনার জন্য বেশ মুশকিল। আসলে, একটি বস্তুকে থামানো কতটুকু সহজ বা কঠিন, তা ঐ বস্তুর ভর এবং বেগ উভয়ের উপরই নির্ভর করে। তাই বিজ্ঞানীরা এই উভয়কে হিসাব করে নতুন একটি টার্ম আনেন যার নাম ভরবেগ। এই ভরবেগকে ইংরেজি p দ্বারা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। আমরা যদি আপেক্ষিকতার হিসাবগুলো আনি, তাহলে ভরবেগ হিসাব করতে যে সূত্রটি ব্যবহার করব তা হলো –

p = \frac{mv}{\gamma}

আর এই ভরবেগই আসলে আপেক্ষিকতার তৃতীয় স্পেশাল আইডিয়া। আপেক্ষিকতা বলে, বস্তুর বেগ যতই আলোর কাছাকাছি হবে, তার ভর বাড়বে কি বাড়বে না তার নিশ্চয়তা নেই, তবে তার ভরবেগ অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে। তাহলে আমরা যদি সঠিক সমীকরণটি লিখি তাহলে তা নিচের মতো দেখাবে –

p = \frac{p_0}{\sqrt{1-\frac{v^2}{c^2}}}

তাহলে বিজ্ঞানীরা আপেক্ষিক ভরের কথা কেন বলেন? কারণ সহজে কল্পনা করার জন্য।আসলে আপেক্ষিক ভরবেগের বিষয়টি সহজে কল্পনা করা যায় না। অন্যদিকে আপেক্ষিক ভরের বিষয়টি খুব সহজেই বুঝানো সম্ভব।

One comment on “আপেক্ষিক ভর বলতে কিছুই নেই!”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।