লেখক : আবু তালহা সিয়াম খান
ড.এ এম হারুন অর রশীদ
বিশ শতকের যে সময়টিতে বিশ্বে বিজ্ঞানের উত্তরোত্তর উন্নয়ন ঘটে চলেছিল, সেই সময়কার একজন সফল তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ড. এ এম হারুন অর রশীদ।
তাঁর নাম হয়তো অনেকে শুনেছেন একজন পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে, কেউ হয়তো তাঁকে জানে শুধু একজন শিক্ষক হিসেবে, অথবা অনেক কাজে ভীষণ ব্যস্ত থাকা সমাজের একটা অংশের কাছে হয়তো তিনি একেবারেই অপরিচিত এবং একজন অচেনা মানুষ। তিনি শুধু পদার্থবিজ্ঞানী নন,বিজ্ঞান গবেষণায় নিবেদিত প্রাণ নন, তিনি একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক। তিনি সাম্যবাদী, সৎ, আদর্শবান ও হৃদয়বান, আত্মপ্রচারবিমূখ পরিপূর্ণ একজন মানুষ -যিনি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নির্মম সত্য কথাটি বলতে পারেন। যে মানুষটি ধর্ম-বর্ণের তর্কে সবসময় নিজেকে নিরপেক্ষ থাকতে জানেন আর দেশের সাধারণ মানুষের জন্যে এখনও কিছু করার স্বপ্ন দেখেন-তিনি আমাদের দেশের গর্ব,আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অধ্যাপক ড. এ এম হারুন অর রশীদ।
বাংলার সহজ প্রকৃতি তাকে জীবন দান করেছিল অন্য সকল সাধারণ মানুষের মতোই। এই প্রকৃতির মাঝে তিনি জীবন গড়েছেন সততা-শৃঙ্খলা, ন্যায়বোধ, মহানুভবতা, আপোষহীনতা আর দেশ প্রেমকে সঙ্গী করে, দেশাত্মবোধ জাগ্রত করে সুযোগ্য উত্তরাধিকার সৃষ্টির অঙ্গিকারে,একই সঙ্গে মহাসংগীতের সুর পাবনে অবগাহন করে,’উদাসী হাওয়ার পথে পথে’ ঝরে-পড়া মুকুলগুলি কুড়িয়ে নিয়ে। ছোটবেলা থেকেই সকল ধর্মের সকল মানুষের সঙ্গে সাবলীলভাবে মিশে-যাওয়া এই মনীষীর চরিত্রে পরিপূর্ণতা দান করেছে যেন সকল মহত্তম গুণ। অক্লান্ত গবেষণায় পদার্থবিজ্ঞানে অশেষ অবদানের মধ্যে দিয়ে বিজ্ঞান -ক্ষেত্রে বাংলাদেশেকে তিনি যেমন গৌরবময় শিখরে উন্নীত করেছে, দেশও তাকে উপযুক্ত স্বীকৃতি দিয়ে সম্মানিত করেছে একুশে পদক,রাষ্ট্রপতি পদক ও স্বাধীনতা পুরষ্কার দিয়ে।
জন্ম ও শৈশব এবং পরিবার পরিচয়
তার জন্ম বরিশালের নলছিটি উপজেলার বাহাদুর পুর গ্রামে মাতুলালয়ে। ১৯৩৩ সালের ১ মে মকসুদ আলী ও জাহানারা বেগমের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন প্রথম সন্তান এ এম হারুন অর রশীদ। পুরো নাম আবুল মকসুদ হারুন অর রশীদ। ড.হারুনের আরও দুই ভাই ও পাঁচ বোন ছিল। মেজভাই এ এম জাহাঙ্গীর কবীর ছিলেন প্রকৌশলী এবং ছোট ভাই এ এম জাহিদ রেজা তিনি ছিলেন ডাক্তার। পাঁচ বোন রাণী, মীরা, বীণা, খুকু ও শেফু। বাবা মকসুদ আলী ছিলেন বরিশাল জেলার প্রথম ব্যক্তি যিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাপ্লাইড ফিজিক্সে এম.এসসি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। এম.এসসি পাশ করার পর তিনি কৃষ্ণ নগর কলেজে শিক্ষকতা করেন (বাংলা বিভাগ হওয়ার আগে নদীয়া জেলার একটি সাবডিভিশন ছিল কুষ্টিয়া, আর তার সবচেয়ে বড় শহর ছিল কৃষ্ণনগর)। ১৯৪৭ সালে বাংলা বিভাগ-এর পর মকসুদ আলী ঢাকায় এসে ঢাকা কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর কিছুদিন কারমাইকেল কলেজে (বর্তমান রংপুর কারমাইকেল কলেজ) থাকার পর সেখান থেকে আবার ঢাকায় ফিরে আসেন A.D.P.I (Assistant Director of public instructor) হয়ে। (তিনি সারাজীবন আদর্শ ও সততার সাথে পথ চলে প্রায় ৬৫ বছর বয়সে মারা যান।তার মৃত্যুর ২ বছর পর জাহানারা বেগম ও ইন্তেকাল করেন।)
কৃষ্ণ নগরের ধর্মীয় ভেদাভেদহীন উদার ঋদ্ধ পরিবেশ আর বাড়ির সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বালক হারুনের চরিত্র গঠনের প্রথম পর্বটি শুরু হয়েছিল। বাবা জনাব মকসুদ আলী এবং মা জাহানারা বেগম দুজনেই সংস্কৃত মনা উদার বিদগ্ধ মনের মানুষ। তার মামাও ছিলেন উভয় বাংলার অত্যন্ত পরিচিত বাংলা সাহিত্যের একমাত্র মুসলমান গল্পলেখক এবং খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক। সংগীত রসিক বাবার খুব ইচ্ছে ছিল ছেলেকে গান শেখাবেন।সরোজ আচার্য্য নামে একজন গানের শিক্ষকও রেখে দিয়েছিলেন তাঁর জন্য।তার কাছে বেশ কিছুদিন গান শিখেছিলেন ড.রশীদ। ছোট ভাই-বোনদের কথামতো খালি গলায় তিনি ভালোই গাইতেন (তবে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ঢাকায় এসে গান শেখা সম্ভব হয়নি)। কৃষ্ণ নগর কলেজে বাবার চাকরি সূত্র ধরে ড. রশীদের শৈশব কেটেছে পশ্চিম বাংলার কৃষ্ণ নগরেই।
শিক্ষাজীবন
বাড়িতে বাবার কাছে লেখাপড়ার হাতেখড়ির পর ছয় বছর বয়সে কৃষ্ণ নগরের রামবঙ্ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে হারুন অর রশীদ তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু করেন।সেখানে কয়েক বছর পড়ার পর বাবা তাকে কৃষ্ণ নগর কলেজিয়েট স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন। স্কুলটা ছিল খুব নামকরা। স্কুলের যে বিরাট ভবনটায় ক্লাস হতো সেটা মনমোহন বসু নামে একজন খুব নামকরা ব্যারিস্টারের বাড়ি ছিল,যা তিনি মারা যাওয়ার আগে ঐ স্কুলে দান করে যান। তখন ঐ স্কুলে তিনি ছাড়া আর মুসলমান ছাত্র ছিল মাত্র কয়েকজন। স্কুলের প্রতিটি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য এবং ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিতির জন্যে প্রতিবার তিনি বিভিন্ন বই পুরস্কার পেয়েছেন। দশম শ্রেণি পর্যন্ত ড.রশীদ কৃষ্ণ নগর স্কুলেই লেখাপড়া করেছেন।কিন্তু দেশবিভাগের পর তাঁর বাবা সপরিবারে তাদের ঢাকায় নিয়ে আসলেন।
ঢাকা এসে তাঁর বাবা তাকে ভর্তি করিয়ে দিলেন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন ইস্ট বেঙ্গল সেকেন্ডারি এডুকেশন বোর্ডের অধীনে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে স্টারমার্কসহ তিনটি বিষয়ে লেটার মার্কস (শতকরা ৮০ নম্বর এবং তার উপরে) পেয়ে সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম শ্রেণীতে চতুর্থ স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হন।
১৯৫০ সালে ইন্টারমিডিয়েট সায়েন্স পরিক্ষায় স্টার মার্কস সহ চারটি প্রধান বিষয়ের সবগুলিতে (ইংরেজি,পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান ও গণিত) লেটার মার্কস পেয়ে সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম শ্রেণীতে তৃতীয় স্থান অধিকার করে উত্তীর্ণ হন। তার ইংরেজিতে লেটার মার্কস পাওয়াটা ছিল তখনকার সময়ে বিরল ঘটনা।
তার স্কুল ও কলেজের কোনো পরীক্ষায় তিনি কখনো দ্বিতীয় হননি।এরপর তিনি এসে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে।১৯৫৩ সালে এই বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে বি.এস.সি সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্নাতকের মধ্যে সমন্বিতভাবে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজা কালী নারায়ণ বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে এম.এসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওভার সীস বৃত্তি নিয়ে উচ্চতর শিক্ষালাভের জন্য যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে যান।
গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে তিনি অধ্যাপক আর.জি মুরহাউজ এবং অধ্যাপক বি.এইচ ব্রান্সডেনের তত্ত্ববধানে ক্ষেত্র তত্ত্বে টাম-ডানকফ আসন্ন মান ব্যবহার করে কে-মেসন নিউক্লিয়ন -এর একটি সমস্যার উপর কাজ করে ১৯৬০ সালে ঐ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবন
ড.রশীদের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৫৬ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এসসি পাশ করার পরপরই চেয়ারম্যান এবং হেড অব দ্যা ডিপার্টমেন্ট অধ্যাপক শচীন মিত্র তাঁকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের প্রস্তাব করেন।স্যারের কথামতো তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
এরপর তিনি যোগ দেন ঢাকাস্থ আণবিক শক্তি কমিশনে (Atomic Energy Commission, Dhaka)। এখানে তিনি ১৯৬২ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত প্রথমে সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার এবং পরবর্তীকালপ প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তানের ইসলামাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট -এর তাত্ত্বিক অধ্যাপক এবং পরবর্তীকালে পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তিনি ১৯৭২ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং বোস সেন্টার ফর এডভান্সড স্টাডিজ এন্ড রিসার্চ -এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৯ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন এবং ১৯৮৫ থেকে অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত তিনি ঐ বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সেন্টারের পরিচালক হিসেবেও কাজ করেন।
১৯৯৩ সালে তিন বছরের জন্য ড.রশীদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোস অধ্যাপক নিযুক্ত হন।তিনি ২০০৬ সালে ইউ.জি.সি(U.G.C- University Grants Commission) প্রফেসর নিযুক্ত হন।এছাড়া তিনি বিভিন্ন সময় প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন।
গবেষণা অভিজ্ঞতা
গবেষণা কাজের জন্য ড.রশীদকে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও আলোচনা সভায় যেতে হয়েছে। এখানে তার ধারাবাহিক বিবরণ তুলে ধরা হলোঃ
-তিনও তাঁর এম.এসসি ডিগ্রি সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় কাজগুলোর অংশ হিসেবে এক্সরে মেথড- এর মাধ্যমে ট্রাই ফিনাইল মিথেনের স্ফটিক গঠনের (Crystal Structure Of Tri-phenyl Methane by X-ray Methods) উপর একটি এম.এসসি থিসিস উপস্থাপন করেন।
-তিনি ১৯৫৬ সালে যুক্তরাজ্যের হারওয়েলের এটমিক এনার্জি রিসার্চ এস্টাবলিশমেন্টের থেকে রিয়্যাক্টর ফিজিক্স – এর উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
-তিনি ১৯৬০ সালে এডিনবারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসপার্সন রিলেশন -এর উপরে সামার ইন্সটিটিউটে অংশ গ্রহণ করেন।
-তিনি ১৯৬২ সালে ট্রিয়েস্টে অধ্যাপক আব্দুস সালাম আয়োজিত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের উপর অনুষ্ঠিত এক সামার সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।
-১৯৬৩ এবং ১৯৬৪ দুই বছর তিনি Institute Fur Theoretical Kernphysik,karlsruhe- এ ভিজিটিং প্রফেরস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
-তিনি ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই,১৯৬৮ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট এবং ১৯৭৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন- এই সময়ে ট্রিয়েস্টের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিওরিটিক্যাল ফিজিক্স – এর ভিজিটিং প্রফেরস ছিলেন।
-১৯৭১ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজ অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে একজন ভিজিটিং প্রফেরস ছিলেন।
-তিনি ট্রিয়েস্টের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিওরিটিক্যাল ফিজিক্স -এর একেকবার প্রথম ব্যাচের একজন এসোসিয়েট হিসেবে এবং পরে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত সেখানে একজন সিনিয়র এসোসিয়েট হিসেবে যুক্ত ছিলেন।তিনি ১৯৬৯,১৯৭০,১৯৮৫ এবং ১৯৯৩ এই সময়ে তিন মাসের জন্যে ঐ সেন্টারে কর্মরত ছিলেন।
-এছাড়াও তিনি লন্ডন,ভিয়েনা,কিয়েভ,টোকিও,হ্যামবুর্গ,বারি এবং অন্যান্য জায়গায় হাই এনার্জি ফিজিক্স কনফারেন্সে যোগদান করেন।
-তিনি ১৯৭৫ সালে আমেরিকার অস্টিনে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের একজন ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন।তিনি ১৯৮৫ সালে স্ট্রীং থিওরির উপর এডিনবরা স্কটিশ সামার স্কুলে অংশগ্রহণ করেন।
-তিনি ১৯৯১ সালে লস এনজেলসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং প্রফেসর ছিলেন।
-তিনি ১৯৯৫ সালে ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস ফিজিক্যাল সোসাইটিতে অংশগ্রহণের জন্য টোকিও যান।
শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা
অধ্যাপক ড.এ এম হারুন অর রশীদ তাঁর দীর্ঘ শিক্ষকতার জীবনে দেশে এবং দেশের বাইরে অসংখ্যা ছাত্র-ছাত্রীদের পদার্থ বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের উপর শিক্ষা দিয়েছেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ও এম.এসসি.ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসিক্যাল মেকানিক্স, কোয়ান্টাম ইলেকট্রডিনামিক্স,আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব এবং ইলেকট্রিসিটি ও ম্যাগনেটিজম ইত্যাদি বিষয়গুলোর উপর শিক্ষা দিয়েছেন।
ইসলামাবাদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এসসি ও এম.ফিল. ছাত্র-ছাত্রীদের নিউক্লিয়ার ফিজিক্স, স্ট্যাটিসটিক্যাল ফিজিক্স, ইলেকট্রোডিনামিক্স এবং সলিড স্টেট ফিজিক্স বিষয়গুলোর উপরে শিক্ষা দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি ঢাকা ও ইসলামাবাদের পিএইচডি ও বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজে অংশগ্রহণকারী অনেক ছাত্র-ছাত্রীর তত্ত্বাবধায়ক শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তিনি তাঁর সুদীর্ঘ শিক্ষকতার জীবনে অসংখ্য কৃতি শিক্ষার্থী সৃষ্টি করেছেন যারা দেশে,বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় গবেষণা কর্মে যুক্ত থেকে তাদের শিক্ষকূের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে তিনিও তাই গর্ববোধ করেন।তাঁর শিক্ষার্থীদের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, আমি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যে,তিনি আমাকে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী উপহার দিয়েছেন।
পারিবারিক জীবন
অধ্যাপক ড.এ এম হারুন অর রশীদ ১৯৬০ সালে বিদেশ থেকে ফিরে যখন ঢাকায় আসেন তখন ঢাকা খুব শান্ত।তিনি থাকতেন পুরানা পল্টনে।তার কিছু দূরেই সেগুন বাগিচা।বাবা-মায়ের পছন্দ মতো তিনি সেগুন বাগিচার মির্জা সিরাজুল হক এবং রাফিয়া মির্জার কন্যা যুথী মির্জার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।যুথী মির্জা তখন ঢাকা বেতারের একজন নামকরা শিল্পী ছিলেন।অবশ্য তার বাবা মারা যাওয়ার পরপরই তিনি গান করা ছেড়ে দেন।
ড.রশীদ দুই কন্যা সন্তান এর জনক।বড় মেয়ে তাহমিনা জয় রশীদ ও ছোট মেয়ে রুখসানা দীপা রশীদ।
সমকালীন রচনা
২০০৩ সালে বাংলা একাডেমি থেকে অধ্যাপক ড.হারুন অর রশীদের লেখা সর্বশেষ বই ”আধুনিক নিউক্লীয় পদার্থবিজ্ঞান” প্রকাশিত হয়েছে।
শেষকথা
সত্তরোদ্ধ এই পদার্থবিজ্ঞানী তার পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন খুব ভালো আছেন।
অবসরে বই পড়েন,মাঝে মাঝে শোনা হয় রবীন্দ্র সংঙ্গীত এবং বেটোফেন আর মোৎসার্টের অনবদ্য সেই সৃষ্টিগুলো।তবে ২০০৬ সালের মে মাসে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর থেকে যেন একটু ক্লান্তি বোধ করছেন তিনি।একটানা অনেকক্ষণ কথা বললে একটু যেন হাপিয়ে ওঠেন।ডাক্তারের পরামর্শ মতো তাই একটু দেখে শুনে চলতে হয়।
ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে যে আদর্শ আর সততার পথে চলা শুরু করে আজ এতদূর পর্যন্ত এসেছেন, জীবনের বাকি পথটুকু ও তিনি সেই সততা আর আদর্শকে সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে চান।